কর্পোরেট অর্থনীতি শহরকে করছে অনেক বেশি গতিশীল। আর গ্রামীণ অর্থনীতি দেশের রাজস্ব আদায়ে রাখছে বড় ভূমিকা। তবে দুটোই দুই সুতোর ঘুড়ি।
ক্লাসরুমের বাইরে শিক্ষার্থীদের এ দুই জগতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে (সিআইইউ) চালু রয়েছে লাইভ-ইন-ফিল্ড এক্সপেরিয়েন্স বা এলএফই কোর্স।
আর এই কোর্সের আওতায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে সিআইইউ বিজনেস স্কুল ছুটে যাচ্ছে কখনও দেশ সেরা বড় প্রতিষ্ঠানের কারখানায়, কখনো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। একদিকে পড়ালেখা, অন্যদিকে ঘোরাঘুরি। দুই অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের স্বাদ দিচ্ছে শহুরে আর গ্রামীণ অর্থনীতির শেখার।
লাইভ-ইন-ফিল্ড এক্সপেরিয়েন্স বা এলএফই কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি এই দুই সেক্টরের জ্ঞান লাভের সুযোগ পান। গ্রামীণ জীবনে জড়িয়ে থাকা খেটে খাওয়া মানুষদের ব্যবহারিক জ্ঞান, তাদের কাজের ধরণ, কোনো পাড়া কিংবা মহল্লার ঐতিহ্যবাহী পেশা, সেখানকার আশপাশের পরিবেশসহ নানান কিছুর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটা আত্মিক বন্ধন তৈরি হয় এই এলএফই কোর্সের মাধ্যমে।
পড়ার মাঝে আনন্দ
বছরজুড়েই লেগে থাকে ক্লাস-পরীক্ষা। চাইলেই গ্রাম থেকে ঘুরে আসার ফুরসত নেই কারও। এলএফই কোর্স এলেই শিক্ষার্থীদের বুকের ভেতরটা আনন্দে দোলা দিয়ে ওঠে। শীতকাল হলে তো কথাই নেই! একদিকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার উপাদান খুঁজে নেওয়া, অন্যদিকে সেই প্রতিবেদনের উপর থাকছে পরীক্ষার নম্বর। কেননা পূর্ণাঙ্গ কোর্স হওয়ায় এখানেও রয়েছে তাদের ৩ ক্রেডিট। তাই ঘোরাঘুরির সঙ্গে পরীক্ষার ফলাফল জড়িত থাকায় এলএফইর গুরুত্বটা শিক্ষার্থীদের কাছে একটু আলাদা গুরুত্ব বহন করে বইকী!
লক্ষ্য শুধু একটাই
আমাদের তরুণদের বেশির ভাগই শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত। অথচ দেশের পুরো অর্থনীতির শতকরা ৮০ ভাগই আসে গ্রামের অর্থনীতি থেকে। এখনকার বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গ্রাম যেনো ক্যালেন্ডারের পাতায় ঠাঁই পাওয়া কোনো জাদুঘর। কিন্তু এই গ্রামেই রয়েছে বিচিত্র আরেক পৃথিবী। আছে নানান পেশার মানুষ। কৃষক, তাঁতী, জেলে, কুমারসহ একাধিক পেশার বাসিন্দারা। যারা দেশের অর্থনীতিতে প্রতিনিয়ত বড় অবদান রাখছে।
কৃষকদের পরিবারের সংখ্যা কজন, তাদের আয়ের উৎস কি, ফসল বিক্রি করে কতটাকা জমা হলো, পরের বছরের পরিকল্পনা কি-এসব হাজারও প্রশ্ন সরেজমিনে মাঠে গিয়ে সুন্দরভাবে তুলে নিয়ে আসছেন সিআইইউর মেধাবীরা।
সমৃদ্ধ হচ্ছে অভিজ্ঞতার ঝুলি
ক্লাসরুমের বাইরে এলএফইর মতো এমন ব্যবহারিক জ্ঞান শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করছে। সর্বশেষ সিআইইউ বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থীদের ৬০ জনের একটি দল পাহাড়বেষ্টিত সিলেটের খাদিম নগরে ৬ দিনের ট্যুরে সফর করছেন। সেখানে তারা ওই এলাকার চা বাগান, কুশির গুল এবং মোকামের গুল-এই তিনটি গ্রাম সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এর আগে অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গিয়েছিলেন কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্টে।
সিআইইউ বিজনেস স্কুলের (ব্যবসা অনুষদ) ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুর কাদের বলেন, এই ধরণের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মাঝে গড়ে ওঠে পিপল ম্যানেজম্যান্ট, টিম ম্যানেজম্যান্ট এবং লিডারশিপ। পাশাপাশি সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন পরিবেশে টিকে থাকার দক্ষতাও তাদের মাঝে তৈরি হয়।
অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ফিল্ড লেভেলে গিয়ে ডাটা সংগ্রহ করায় শিক্ষার্থীরা গ্রামীণ অর্থনীতি, সামাজিক, পারিবারিক এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানান একই অনুষদের আরেক অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাঈম আবদুল্লাহ।
সিআইইউ বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থী আদিবা সুলতানা বলেন, এই ধরনের কার্যক্রমে আমরা সবাই মিলে একাধিক দলে ভাগ হয়ে কাজ করি। বিভিন্ন গ্রামে ছুটে যাই। সেখানকার মানুষজনের সাথে কথা বলি। গ্রামীণ অর্থনীতি নিয়ে জানতে হলে শহরে না থেকে গ্রামেই আসতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।