হ্যাকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া দেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর ই-মেইল সার্ভার ছয় দিনেও উদ্ধার করা যায়নি।
ফলে ‘বিকল্প ব্যবস্থায়’ বিমানের অপারেশনাল ই-মেইল চালু রেখে কাজ চালানোর কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বলা হয়, শনিবার বিমানের কিছু সংখ্যক কম্পিউটার ও সার্ভার ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হলে সেদিন সঙ্গে সঙ্গে সন্দেহজনক সার্ভার বিচ্ছিন্ন করে ই-মেইল সার্ভিস বন্ধ করা হয়।
র্যানসমওয়্যারের মাধ্যমে সার্ভারটি হ্যাকারদের দখলে চলে গেলে এখন বিকল্প ব্যবস্থায় বিমানের অপারেশনাল কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ই-মেইল আইডিগুলো মাইক্রোসফট ক্লাউড সার্ভিসের মাধ্যমে চালু আছে।”
কম্পিউটার হ্যাকিং ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর সাফ্ফাত আহম্মদ খান জানান, র্যানসমওয়্যার হলো বিশেষ এক ধরনের ম্যালওয়ার যা কম্পিউটারে কোনো ফাইলের মাধ্যমে পবেশ করে ফাইলকে এনক্রিপ্ট করে ফেলে। ফলে ওই সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হ্যাকারদের হাতে। তখন সেই সার্ভারে ঢুকতে গেলে হ্যাকাররা মুক্তিপণ দাবি করে।
তিনি বলেন, “বিমান-এর মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সার্ভার র্যানসমওয়্যার থেকে সুরক্ষিত রাখতে সবসময় ভালো মানের এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত।”
বিমান-এর কমপিউটার ব্যবহারকারীরা অনলাইনে সতর্ক থাকলে এরকম সাইবার দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করেন তিনি।
ভবিষ্যতে এরকম দুর্ঘটনা এড়াতে ই-মেইল বা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে আসা ফাইল যাচাই করা ছাড়া ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা এবং সম্ভব হলে প্রয়োজনীয় ফাইলগুলোর ব্যাকভাপ কপি সংরক্ষণ করার ব্যাপারেও পরমার্শ দেন সাফ্ফাত আহম্মদ খান।
বিমান কর্মকর্তারা জানান, সার্ভার হ্যাকারের কব্জায় চলে যাওয়ায় গত শুক্রবার থেকে বিমানের নিজেদের মেইল থেকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক যোগাযোগগুলো বন্ধ রয়েছে। সার্ভার উদ্ধার না হওয়ায় ই-মেইল যোগাযোগের তথ্যগুলো ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। বিমানের অভ্যন্তরীণ কেনাকাটা, শিডিউল, বিলিং ইত্যাদি বিষয়ে ই-মেইলে যোগাযোগ করে থাকেন কর্মকর্তারা।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম অবশ্য মনে করেন, এটা হ্যাকারদের কাজ নাও হতে পারে।
গতকাল তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না এটা হ্যাকিং। কোনো পেনড্রাইভ বা কোনো ফাইল থেকে ঢুকে গেল কি না সেটাও দেখার বিষয় রয়েছে। তবে এই ম্যালওয়্যার ফায়ার ওয়াল পর্যন্ত যেতে পারে নাই।”
তিনি বলেন, “সরকারের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি থেকে টিম এসে একবার দেখে গেছে। তারাই এটা দেখবে। আমরা আদারওয়াইজ এখানে কিছু করতে পারব না। যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই রাখতে হবে। শুধু মেইল সার্ভার আক্রান্ত হয়েছে। বাকি তথ্য ঠিক আছে। আমাদের অপারেশনাল ই-মেইল আমরা রিকভার করেছি। আমাদের তো অনেকগুলো ই-মেইল আছে। সবগুলো তো আর সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণগুলো আমরা রিকভার করে কাজ করছি।”
বিমানের সার্ভার হ্যাকিং তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করার কথা গতকাল জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
হ্যাকারদের আক্রমণের ফলে কোনো তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে কিনা, সেই প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “এখনো বিষয়গুলো সেভাবে জানা যায়নি।”