বান্দরবানে চুুরির অপবাদে মা-শিশুকে পেটালেন ইউপি চেয়ারম্যান

বান্দরবান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৮ মার্চ, ২০২৩ at ৩:০৭ অপরাহ্ণ

বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগরে স্বর্ণ চুরির অভিযোগে অসহায় নারী ও তার শিশু সন্তানকে মধ্যযুগীয় কায়দায় পেটালেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আজিজনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দীন।

এসময় স্থানীয়রা তাদের আর্তচিৎকার শুনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ এসে তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় সোমবার রাতেই আজিজনগরে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। আহত মা ও শিশুকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তারা হলেন আজিজনগর ইউনিয়নের সোলাইমান বাজার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফ পাড়ার বাসিন্দা মো. মোর‌শেদের স্ত্রী সেলিনা আক্তার (৩০) ও তার শিশু সন্তান মো. সেলিম ওরফে সোহাগ (৯)। শিশুটি চা‌ম্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। নির্যাতনকারী ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় সেলিনা আক্তারের স্বামী ও সোহাগের পিতা মো. মোরশেদ হাওলাদার লামা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

অপরদিকে, ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনও লামা থানায় চুরির অভিযোগে করেছেন।

নির্যাতনের স্বীকার সেলিনা আক্তারের স্বামী ও সোহাগের পিতা মো. মোরশেদ হাওলাদার বলেন, “জসিম চেয়ারম্যানের স্ত্রী আমাকে ফোন করে গত শনিবার রাতে দেখা করতে বলেন। আমি আর আমার স্ত্রী দেখা করলে আমাদেরকে ছেলে স্বর্ণ চুরি করার অভিযোগ করে আমাদের তিনজনকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করেন এবং আমার আহত ছেলেকে আটকিয়ে রাখেন। আমার সম্পত্তি লিখে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে যেতে বলেন। স্থা‌নীয়‌দের সহায়তায় আমরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ছেলেকে উদ্ধার করি। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আহত মা ও ছেলেকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “গত দুই বছর ধরে আমার ছেলেকে পড়ালেখার কথা বলে নিয়ে গিয়ে ঘরের কাজ করতে দেন চেয়ারম্যান। ঘরের কাজ করালেও দুই বছরে আমাদের কোনো টাকা দেননি।”

আজিজনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর এনামুল হক ভূঁইয়া জানান, গত দুই বছর ধরে ছেলেটাকে লেখাপড়া করানোর জন্য বলে চেয়ারম্যানের বাসায় রাখা হয়েছে। ছেলেটা বাড়ির কাজকর্মও করত। কয়দিন আগে চেয়ারম্যানের বউয়ের স্বর্ণ চুরি হয়। সেই স্বর্ণ চুরির অপবাদে চেয়ারম্যান ছেলেটাকে পিটিয়েছে। তারপর মা-বাবাকে ডেকেও কিল, ঘুষি, থাপ্পড় মারে। পরে ছেলেটাকে আটকিয়ে রাখেন চেয়ারম্যান। এ সময় ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবা-মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত আজিজনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন ব‌লেন, “শিশু সোহাগ আমার বাসা থেকে স্বর্ণ চুরি করেছে। ছে‌লেটা আমার কা‌ছে ২ বছর ধ‌রে ছিল। আ‌মি‌তো শিশুটিকে ধ‌রে এ‌নে বেঁধে রাখিনি যে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পু‌লিশ এসে উদ্ধার কর‌বে? এটি সত্য নয়।”

তিনি বলেন, “আমার বাসায় যদি চুরি হয় তাহলে আমি ছেলেটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব না, ধমক দেব না? স্বর্ণ চুরির ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ করেছি।”

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে আমরা শিশুটিকে উদ্ধার করে পিতা ও মায়ের জিম্মায় দিয়েছি। উভয়পক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ঘটনায় থানায় মামলা হবে।”

প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় সোমবার রাতে অসহায় নারী ও শিশুকে চুুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিভিন্ন স্থানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহত চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীর নামে বৃত্তি চালু