ফরিদপুরে সংসদীয় আসন সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ও পুরোনো সীমানা বহালের দাবিতে আন্দোলনরতরা ভাঙ্গা থানায় ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর এবং উপজেলা পরিষদে আগুন দিয়েছে। পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে প্রশাসনের জোর নিরাপত্তার মধ্যেই গতকাল সোমবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা এ ঘটনা ঘটান। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আমরা পাশে আছি। কিন্তু জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে প্রতিরোধ করা হবে।
গত ৪ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসে ফরিদপুর–৪ আসনের ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদি ইউনিয়নকে পাশের ফরিদপুর–২ আসনে সংযুক্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে গত ৫ দিনে তিন দফায় ঢাকা–খুলনা ও ঢাকা–বরিশাল মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেছে স্থানীয়রা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ। সবশেষ রোববারও সকাল–সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। খবর বিডিনিউজের।
ভাঙ্গায় চলমান বিক্ষোভ–অবরোধকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের ঘটনায় রোববার রাতে ৯০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। ভাঙ্গা থানার এসআই হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে এ মামলা করেন। এতে আন্দোলন ঘিরে গঠিত ‘সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের’ প্রধান সমন্বয়ক ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়। পরে সিদ্দিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
সোমবার ও মঙ্গলবার অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে ঢাকা–বরিশাল ও ঢাকা–খুলনা মহাসড়কের দুটি স্থানে অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এতদিন ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামেরদীবাসী আন্দোলন করলেও সোমবার অন্য ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হোন এলাকাবাসী। এ সময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অবস্থান নেয়। তবে পুলিশের তরফ থেকে আন্দোলনকারীদের বাধা দিতে দেখা যায়নি। বেলা ১টার দিকে বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার জনতা লাঠিসোঁটা, রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিছিল নিয়ে যোগ দেন। মুহুর্তেই সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালান তারা। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন আর্মড পুলিশ সদস্য দৌড়ে গিয়ে পাশের ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন। উত্তেজিত জনতার ইটপাটকেলে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। একপর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও মসজিদের লোকজন অবস্থান নিয়ে তাদের রক্ষা করেন।
এরপর সেখান থেকে বিক্ষুদ্ধরা থানার দিকে চলে যান আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে থানায় থাকা গাড়ি ও থানা ভাঙচুর করেন। তখন ভেতরে আটকা পড়েন পুলিশ সদস্যরা। পরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন দেওয়া হয় সেখানে থাকা মোটরসাইকেলে। পরে হাইওয়ে অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পড়েন সাংবাদিকদরা। এ সময় মাই টিভির ভাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি সরোয়ার হোসেনসহ অন্য সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যরা আহত হন।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, আমরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করছি এবং নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের বলা হয়েছে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে। আমরা প্রতিবেদন দিলে আশা করি দুই একদিনের মধ্যে সমাধান হবে।