ঘরে ঘরে জ্বরের প্রকোপ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও ভাইরাস জ্বর বেড়েছে, কমেছে করোনা

জাহেদুল কবির | সোমবার , ১৪ জুলাই, ২০২৫ at ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে বেড়েছে জ্বরের প্রকোপ। প্রায় প্রতিটি ঘরে রয়েছে জ্বরের রোগী। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একজন সেরে উঠছেন তো পরে আরেকজন আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকের জ্বরের পাশাপাশি সর্দি, কাশি ও তীব্র শরীর ব্যথার সমস্যাও রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, করোনা এবং ভাইরাস জ্বরের (ফ্লু) প্রকোপ রয়েছে। তবে করোনা জনিত জ্বরের প্রকোপ কমলেও বেড়েছে চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু। যদিও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা তেমন একটা করেন না রোগীরা। চিকিৎসকরা রোগীর উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা দিচ্ছেন। সরকারিভাবে কোথাও হচ্ছে না চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা। এছাড়া রয়েছে ভাইরাস জনিত জ্বরের দাপট। কয়েক ধরনের ভাইরাস জ্বর থাকায় জ্বর হলে তাই অনেক রোগী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রোগীদের মনের মধ্যে সন্দেহউদ্বেগ বাসা বাধে।

চট্টগ্রামের কয়েকজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জানান, দেশের বর্তমান আবহাওয়ায় দিনে গরম, আবার হঠাৎ বৃষ্টি এবং রাতে হাল্কা ঠাণ্ডা পড়ছে। ফলে জ্বরসর্দিকাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় সব বয়সী মানুষ। জ্বরের মাত্রা থাকছে ১০২ থেকে ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত। জ্বর তিন থেকে চারদিন থাকছে। জ্বর কমে গেলেও সর্দিকাশির সঙ্গে থাকছে শারীরিক দুর্বলতা। সাধারণত ভাইরাস জ্বরে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এন্টিবায়েটিক ওষুধ খাওয়া শুরু দেন। এটি কখনো করা যাবে না। ভাইরাস জ্বর এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ডেঙ্গু, করোনাসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হবে।

এদিকে ডেঙ্গু এক সময় কেবল শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন গ্রামেগঞ্জেও ছড়িয়েছে এর বিস্তৃতি। চলতি বছর মোট ৬০৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৩৩২ জনই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার। গ্রাম থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ শহরে যাতায়াত করছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড় দেয়ার কারণে সাধারণ মশাও ডেঙ্গুর বাহক হয়ে উঠছে। যদিও ডেঙ্গুর প্রধান বাহক হচ্ছে এডিস মশা। চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে বাঁশখালীতে। এছাড়া সীতাকুণ্ডে ৭৫ জন, সাতকানিয়ায় ২৬ জন, আনোয়ারায় ২৫ জন এবং লোহাগাড়ায় আক্রান্ত ২৩ জন। অপরদিকে দুই মাস পর ডেঙ্গুতে গত শনিবার নুরুল আলম নামের ৬৫ বয়সী এক ব্যক্তি মারা গেছেন। পটিয়ার বাসিন্দা নুরুল আমিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত শুক্রবার ভর্তি হয়ে একদিন পর মারা যান। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।

অপরদিকে কমছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, নগরীর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ল্যাবে ৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৯৭ জন এবং মারা গেছেন ৮ জন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব দৈনিক আজাদীকে বলেন, সম্প্রতি জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। তবে জ্বর হলে চিকিৎকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় চিকিৎসা নিলে চলবে। কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে যেতে হবে। যদি দেখা যায়তীব্র জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্ট থাকে। এখন যেহেতু ভাইরাসের পাশাপাশি ডেঙ্গু, করোনা ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ রয়েছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবড় ব্যবধানে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সমতায় বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক এমপি ফজলে করিমের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা