বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সব দলই একমত। যদি তাই হয়, তবে এই ঘোষিত সময়ের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন করা অসম্ভব। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ কথা জানান। সালাহউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে, নির্বাচনী কৌশল হিসেবে তারা অনেক কথাই বলতে পারে। কিন্তু যেটা সম্মত হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য, মোটামুটি সব দলই একমত। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত অথবা ঘোষিত না বললেও সম্মত বলা যায় যে সময়, সেই সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব পক্ষ এবং সব রাজনৈতিক দল একমত।
কোনো দলকে দ্বিমত হতে দেখেননি দাবি করে তিনি বলেন, যদি তাই হয়, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা বা আয়োজন করা, এটা এক প্রকার অসম্ভব। কারণ প্রতিটি স্তরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে কমপক্ষে ছয় মাসের বেশি সময় লাগে, সেটা ইউনিয়ন পরিষদ হোক, পৌর সভা হোক, উপজেলা পরিষদ হোক, সিটি কর্পোরেশন হোক। এটা একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ। সেজন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগেও বলা হয়েছিল যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথা সময়ে করতে হয়ত পারব না। এখন সরকার যদি চায়, করতে হবে–এরকম একটা কথা তারা বলেছিল। যেখানে বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল চায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে সময়সীমা ঘোষণা করেছেন বা সম্মত হয়েছেন তাহলে এখানে তো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনো সুযোগই নাই, প্রশ্নই নাই।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাক্ষাতে ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি আলাপ হয়েছে কিনা তা জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাক্ষাৎ হয়েছে, এটা পত্রিকান্তরে দেখলাম। লন্ডন বৈঠকের পরে আমরা আহ্বান করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে লন্ডন বৈঠকে যেটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০২৬ এর ফেব্রুয়ারি প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য, সেই বার্তাটি তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) সরকারিভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অথবা নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। সেই জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাক্ষাতের বিষয়টি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, এটা প্রকাশিত হওয়ার পরে আমরা আশা করেছিলাম হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে, অথবা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কিছু জানানো হবে, কী বিষয়ে আলাপ হলো, কী বিষয়ে বৈঠক হল। সবাই এখন আমরা, ধারণা করে নিচ্ছি, প্রধান উপদেষ্টা তার বার্তাটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছেন, ২০২৬ এর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজান শুরুর আগের সাপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়ে, এটা আমাদের ধারণা। যদি উভয় পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয় জাতির সামনে, তাহলে আমরা আশস্ত হব।
বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকবারই বলা হয়েছে, তাদের সমস্ত প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের ভেতরে সমাপ্তি হয়ে যাবে এবং কেনাকাটার যাবতীয় কায্র্ক্রম সেপ্টেম্বরের ভেতরে সমাপ্ত করতে পারবে। ইতিপূর্বে জুলাইয়ের মধ্যে তারা সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবেন এরকম কথাও আমরা শুনেছিলাম। যেহেতু কেনাকাটার প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে এবং সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য তারা সকল কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছেন সেই হিসেবে বলা যায়, সেপ্টেম্বর যথেষ্ট সময়।
নির্বাচনের জন্য যে সমস্ত জিনিস প্রয়োজন সেগুলো তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, হালনাগাদ করা সেটা হয়ে গিয়েছে এবং অন্যান্য যেসমস্ত বিষয়াদি আছে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়, সেটাও তারা করে ফেলেছেন। আর বাদ বাকি যেটা আছে সীমানা পুনবিন্যাস, সেটা তিন মাসের মধ্যে সমাপ্ত করা যায়। এরপরে তফসিল ঘোষণার পরে অনেক কায্র্ক্রম থাকবে পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগসহ ভোট কেন্দ্র ঠিক করা, ট্রেনিং করা, এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। এগুলোর জন্য প্রস্তুতি লাগে না।