চট্টগ্রাম মহানগরীতে পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের আরো একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির পরামর্শক নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ২৪টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। যাচাই বাছাই শেষে একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। উত্তর কাট্টলী স্যুয়ারেজ স্যানিটেশন প্রজেক্ট নামের ২ হাজার ৮শ কোটি টাকার এই প্রকল্পটিতে ফ্রান্স অর্থায়ন করছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পরিকল্পিত কোনো স্যুয়ারেজ সিস্টেম নেই। মানুষের বাসাবাড়িতে সেপটিক ট্যাংকে ময়লা জমা হয়। এছাড়া প্রতিদিন নগরীতে প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন লিটার বর্জ্য পানি নিঃসৃত হয়ে নদীতে পড়ছে। ২০৩০ সালে এর পরিমাণ প্রতিদিন ৫১৫ মিলিয়ন লিটারে গিয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া নগরে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ ঘনমিটার ফিকেল স্ন্যাজ সেপটিক ট্যাংকে জমা হচ্ছে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৭১৫ ঘনমিটার হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ওয়াশরুমের বর্জ্য পানি নগরীর নালা হয়ে নদীতে পড়ছে। নালার ভিতর দিয়ে যাওয়া ওয়াসার পাইপলাইনেও এসব পানি ঢুকে পড়ছে।
শহরের পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে, যা সার্বিকভাবে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণ করছে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। পরিকল্পিত কোনো স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে না ওঠায় বছরের পর বছর ধরে টয়লেটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম মহানগরী শূন্যের কোটায় রয়েছে।
১৯২৩ সালে ঢাকায় স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও চট্টগ্রামে কিছুই হয়নি। ১৯৬৩ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ওয়াসা চট্টগ্রামে গত ৬১ বছরে পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয় স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তুলতে পারেনি। চট্টগ্রামকে হেলদি সিটিতে পরিণত করতে হলে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের উন্নয়নের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টি অনুধাবন করে পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ছয়টি স্যুয়ারেজ এবং দুটি ফিকেল স্ন্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করার প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ছয়টি জোনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ক্যাচমেন্ট–১ এর কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যক্রমে নগরীর ২১টি ওয়ার্ডের ২৮ হাজার বাড়িঘরে স্যুয়ারেজের লাইন যুক্ত করা হচ্ছে। ২০০ কিলোমিটারের বেশি পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে মাটির ৫ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত গভীরে। নির্মাণ করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় ম্যানহোলসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো।
এর মধ্যে একটি অংশে হালিশহরের চৌচালায় ১৬৩ একর ভূমিতে দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হচ্ছে। যার একটিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে আনা বর্জ্য প্রতিদিন ৯ কোটি লিটার পরিশোধন করে পরিবেশসম্মতভাবে সাগরে ফেলে দেওয়া হবে। অপর প্ল্যান্টটিতে (বিশেষ ধরনের গাড়িতে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য) দৈনিক ৩০০ টন বর্জ্য পরিশোধন করা যাবে। এই প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম।
চলমান এই প্রকল্পটির পাশাপাশি নগরীর উত্তর কাট্টলী স্যুয়ারেজ স্যানিটেশন প্রজেক্ট নামের ক্যাচমেন্ট–৫ (কাট্টলী এবং সন্নিহিত অঞ্চল)-এর মাঠ পর্যায়ের কাজ আগামী বছরের শুরুতে আরম্ভ করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পটিরও পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলামকে। ইতোদশ্যে এই প্রকল্পটির কাজ শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রে ২৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই করে একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। পরামর্শক নিয়োগের পর প্রকল্পের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ শুরু হবে।
প্রকল্প পরিচালক আরিফুল ইসলাম জানান, আগামী বছরের শুরুতে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা করবে এবং পরিবেশের উন্নতি হবে।