কক্সবাজারে দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি শোধনাগার নিয়ে বেশ জল গড়িয়েছে। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার চাঁন্দের পাড়ায় অবস্থিত এই শোধনাগার নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা পর্যন্ত করেছে। সবকিছু শেষে কার্যাদেশের নির্ধারিত সময়ের বহু পরে হলেও অবশেষে এই গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আগামী দেড় সপ্তাহের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে এই বহুল প্রত্যাশিত প্রকল্পটি– এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক গোলাম মুক্তাদির।
গতকাল শনিবার তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগটা এখনো হয়নি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া পাবে। পেলেই প্রাথমিকভাবে চালু হবে পানি সরবরাহ। তিনি জানান, প্রথমে হোটেল–মোটেল জোনকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের পানির লাইন দেয়ার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় পাইপ বসানো হয়েছে। ক্রমান্বয়ে শহর ও প্রস্তাবিত এলাকায় লাইন চলে যাবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘরের জন্য এক হাজার লিটার এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা, আর হোটেল–মোটেল জোনে বাণিজ্যিকভাবে যারা ব্যবহার করবে তাদের জন্য প্রতি এক হাজার লিটার এর মূল্য ৪০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। জেলা শহরসহ সদর উপজেলার ২ ইউনিয়নের সিংহভাগ এলাকাতেই ক্রমে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এছাড়া উখিয়া ও টেকনাফের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ভোগান্তি বেড়েছে উখিয়া–টেকনাফের আশ্রয় ক্যাম্পেও। এতে জেলার সরকারি প্রায় ৩১ হাজার নলকূপের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার অকেজো হয়ে পড়েছে। পানি উঠছে না আরো অন্তত কয়েক হাজার নলকূপে। উপকূল–সমতল, উঁচু নিচু পাহাড়ি জনপদ সংকট একই ধরনের। তথ্য মতে, সম্প্রতি এক দশক ধরে পানের অযোগ্য লবণাক্ত পানি উঠছে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায়। ফলে গুরুতর পানি সংকটে পড়েছেন অন্তত ৫ লক্ষাধিক বাসিন্দা। এই প্রেক্ষাপটে সংকট নিরসনে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২০ সালে ‘ভূ–উপরস্থ পানি শোধনাগার’ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে সরকার। দুই দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালে শোধনাগারের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও আবারো মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি জুন মাস পর্যন্ত করা হয়। এদিকে সর্বশেষ বাড়ানো সময় মতে চলতি জুনের মধ্যে লাইন চালুর কথা। জুনে না হলেও জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে লাইন চালু হবে বলে শতভাগ আশা প্রকাশ করেছেন প্রকল্প পরিচালক।
জানা গেছে, শহরের গোলদিঘিপাড় এলাকায় পাহাড়ে একটি মাদার ট্যাঙ্কসহ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা, দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়া, সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট এবং বাস টার্মিনাল এলাকাসহ পাঁচটি ওভার ট্যাঙ্ক বা উচ্চ জলাধার তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্প–সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি ঘণ্টায় ১০ লাখ লিটার (এক হাজার মিটার কিউব) পানি পরিশোধন করা হবে শোধনাগারে। সেখান থেকে পৌরসভার ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে পানি সরবরাহ করা হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামাণিক বলেন, পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। শুরুতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেরি হওয়ায় সরবরাহ লাইনের কাজ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। বিদ্যুতের এই সমস্যা এখনো কাটিয়ে উঠা যায়নি। এই সপ্তাহের সে সমস্যা সমাধান হবে এবং সাথে সাথে সংযোগ স্থাপন হবে। এর মধ্য দিয়ে চালু হতে যাচ্ছে শোধনাগার প্রকল্প।
প্রকল্প পরিচালক গোলাম মুক্তাদির বলেন, আমরা যখন প্রকল্পটি হাতে নিই তখন হাউসহোল্ড কানেকশন ধরাই ছিল না। কারণ হাউসহোল্ড কানেকশনটা পৌরসভা দেওয়ার কথা ছিল। পরে পৌরসভা অপারগতা প্রকাশ করলে কাজটা পিছিয়ে যায়। এখন এ প্যাকেজটি নতুন করে প্রকল্পের ভেতরে আনা হয়েছে। যদিও দেরি হয়েছে, তারপরও প্রকল্পটি রিভিশন করে হাউস কানেকশন ইনক্লুড করে মন্ত্রণালয় থেকে পাস করিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে গেছে।