আওয়ামী লীগ ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিবিসিকে যা বললেন ড. ইউনূস

| রবিবার , ২২ জুন, ২০২৫ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়ে গেছে। পুরোপুরি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার হবে। অন্তর্বর্তী সরকার চায়, তিনি বিচারের মুখোমুখি হোন। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করবে সরকারযেভাবে একজন অভিযুক্তকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটাই করা হবে। সমপ্রতি যুক্তরাজ্য সফরকালে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের রাজনীতি, সংস্কার, নির্বাচন ও রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। সাংবাদিক রাজিনি বৈদ্যনাথনের নেওয়া এ সাক্ষাৎকার গতকাল শনিবার বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। খবর বাংলানিউজের।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা বহুবার এটা ব্যাখ্যা করেছি, আবারও বলছি। প্রথমত, আওয়ামী লীগ না থাকলেও নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কিনা; সমপ্রতি ঢাকায় জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর খুব ভালোভাবে এটা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক মানে কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, সব মানুষের অংশগ্রহণ। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ ভোট দিতে পারছে, ততক্ষণ এটা অন্তর্ভুক্তিমূলক।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আগে একটা বিষয় পরিষ্কার করিআওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যার মধ্যে নির্বাচনও পড়ে। এটা সাময়িক। নির্বাচনে তারা থাকবে কিনা, সেটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

প্রশ্ন: তাহলে আগামী নির্বাচনের ব্যালটে তাদের থাকার সম্ভাবনা আছে?

অধ্যাপক ইউনূস: আবারও বলছি, এটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়।

প্রশ্ন: আচ্ছা, যেহেতু আমরা আওয়ামী লীগ নিয়ে কথা বলছি, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আপনি দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো আপনি তাকে ফেরত আনতে চান, তাই না? তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তা নিয়ে আপনি তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চান?

অধ্যাপক ইউনূস: বিচার ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, এটা চলমান একটা প্রক্রিয়া। পুরোপুরি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার হবে। আমরা চাই তিনি বিচারের মুখোমুখি হোন। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করবযেভাবে একজন অভিযুক্তকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটাই করব। এটা সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া।

প্রশ্ন: কীভাবে তাকে ফিরিয়ে আনবেন?

অধ্যাপক ইউনূস: আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। তাকে ধরে আনার কোনো ক্ষমতা তো আমাদের নেই।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনি যেসব অভিযোগ করেছেন, শুধু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও, যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতিসহ আরও অনেক অভিযোগ আছেএসব সত্ত্বেও তিনি তাকে এতদিন থাকতে দেওয়ায় আপনি কি মোদির ওপর বিরক্ত নন?

অধ্যাপক ইউনূস: তার ভারতে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য তেমন কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে তার কণ্ঠস্বর, তিনি নিয়মিত বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দেন, মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করেন।

প্রশ্ন: তাহলে আপনি মনে করেন ভারতকে আরও কিছু করা উচিত, যেন তিনি এই ভাষণগুলো না দিতে পারেন?

অধ্যাপক ইউনূস: সেটা আপনি বলছেন।

প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের শত শত সমর্থক বা সহানুভূতিশীলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, আপনি কি তাহলে ঠিক তাদের মতোই সমালোচকদের দমন করছেন?

অধ্যাপক ইউনূস: এটা বলা লজ্জাজনক হবে! আপনি যদি অন্তর্বর্তী সরকারকে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি বাংলাদেশকে বোঝেন না, বাংলাদেশের বাস্তবতাকে বোঝেন না। আপনি বোঝেন না আওয়ামী লীগ কী, আর অন্তর্বর্তী সরকার কী।

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমি জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার সাথে দেখা করেছি, কী করা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করেছি, এবং এদের ফেরার জন্যে সহায়তা চেয়ে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। সেক্ষেত্রে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। সবাই এখন শুধু খাবার ও অন্যান্য সহায়তা নিয়েই ব্যস্ত, কিন্তু এদের নিজ দেশে কীভাবে ফেরত পাঠানো যাবে, সে বিষয়ে কেউ আলাপ করছে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফের কলম বিরতির ডাক এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের
পরবর্তী নিবন্ধএনসিটি পরিচালনা করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ