চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অব্যবহৃত নতুন একটি এনজিওগ্রাম মেশিন আসছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেশিন স্থানান্তর করার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। গত ৫ বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার নিজ এলাকা মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একসঙ্গে দুটি এনজিওগ্রাম মেশিন বরাদ্দ দেন। এতবছরেও জনবল সংকটের কারণে মেশিন দুটি চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই রোগীর চাপ বিবেচনায় এরমধ্যে একটি মেশিন চমেক হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ৮ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা–১ শাখার উপসচিব মো. শাহাদত হোসেন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে– চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক রোগীকে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অব্যবহৃত দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্য থেকে উপযুক্ত একটি চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায় মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি উপযুক্ত ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হল। এ বিষয়ে চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার, নিমিউ অ্যান্ড টিসি প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় চার বছর ধরে জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের একটি মেশিন দিয়ে টিপিএম, পিপিএম, এনজিওগ্রাম, পেরিপাইরাল এনজিওগ্রাম ও রক্তনালীতে রিং স্থাপনের কাজ চলছে। অতিরিক্ত চাপের কারণে গত বছরের জানুয়ারিতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ মেশিনটি বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে মেশিনটির সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা পিকচার টিউব স্থাপন করে সচল করেন। এছাড়া গত ২০২১ সালের শেষের দিকে অপর একটি এনজিওগ্রাম মেশিনের পিকচার টিউব নষ্ট হয়ে যায়। মেশিনটি সচল করার জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জানায় মেরামত করতে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে। সেটি আর মেরামত করা হয়নি।
হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, হৃদরোগ বিভাগে এনজিওগ্রাম মেশিন সংকটের সমাধান হলে কাজের গতিও দ্বিগুণ হবে। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি। হৃদরোগের চিকিৎসায় উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারত, সিঙ্গাপুর–ব্যাংককসহ বিশ্বের উন্নত দেশে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতাল। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েক কোটি মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূর উদ্দিন তারেক দৈনিক আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতালে দিন দিন হৃদরোগীর চাপ বাড়ছে। রোগী অনুপাতে এখানে অন্তত তিনটি মেশিন দরকার। সেখানে আমরা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি মেশিন দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। নতুন মেশিন আসলে কাজের গতি বাড়বে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের জন্য মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অব্যবহৃত একটি এনজিওগ্রাম আসবে। আনার জন্য অর্থ বরাদ্দও হয়ে গেছে। আশা করি শিগগিরই এটি চলে আসবে।