১৭ প্রকল্পে বরাদ্দ ৬ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা

ব্যয় হবে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নগ উন্নয়নে প্রস্তাবিত বাজেটে গুরুত্ব পেয়েছে চট্টগ্রাম

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ৩ জুন, ২০২৫ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

নতুন অর্থবছরের (২০২৫২০২৬) প্রস্তাবিত বাজেটে নগর উন্নয়নে ১৭ প্রকল্পে ৬ হাজার ৬৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান চার প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বাকি অর্থে শহরের রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাসট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন করা হবে। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের ভবন নির্মাণে ২৭৭ কোটি এবং চট্টগ্রাম বন্দরে আগত বিদেশি নাবিকদের সাময়িক আবাসন ও বিনোদন সুবিধা দিতে গৃহীত একটি প্রকল্পের বিপরীতে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

গতকাল সোমবার ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’এ ঘোষিত ২০২৫২০২৬ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। অতীতের ন্যায় এবারও জাতীয় বাজেটে গুরুত্ব পেয়েছে চট্টগ্রাম। গত অর্থবছরে (২০৪২০২৫) প্রস্তাবিত বাজেটে চট্টগ্রাম মহানগরের উন্নয়নে ১৭ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৩৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যার সংশোধিত বাজেট হচ্ছে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর আগে ২০২৩২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চট্টগ্রাম মহানগর উন্নয়নে ১৮ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ২০৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

কোন সংস্থার জন্য কত বরাদ্দ : প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নগরের তিন সেবা সংস্থার মধ্যে সবেচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে সিডিএ। সংস্থাটির ৬ প্রকেল্পের বিপরীতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে (২০২৪২০২৫) সংস্থাটির একই প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ২৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা ১ হাজার ৪৮৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় এসে দাঁড়ায়।

অন্য দুই সেবা সংস্থার মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) চার প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৭০০ কোটি ১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে (২০২৪২০২৫) সংস্থাটির পাঁচ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৫৫০ কোটি টাকা। যার সংশোধিত বাজেট হচ্ছে ৪৭০ কোটি ১ লাখ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসার ৩ প্রকল্পে ৮০২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত অর্থবছরে (২০২৪২০২৫) সংস্থাটির ২ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৬০০ কোটি। তবে সংশোধিত বাজেটে তা ৯৭৭ কোটি ৩০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়।

সেবা সংস্থার বাইরে চট্টগ্রাম বন্দরের দুই প্রকল্পে ২ হাজার ৮৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত অর্থবছরে (২০২৪২০২৫) সংস্থাটির প্রকল্প দুইটির বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। যার সংশোধিত বাজেট হচ্ছে ২ হাজার ২৪২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। গণপূর্ত অধিপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নাবিক ও প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিদপ্তরএর তিন প্রকল্পে ৬২৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত অর্থবছরে (২০২৪২০২৫) সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ পায় ৪৭৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যার সংশোধিত বাজেট হচ্ছে ৯৮০ কোটি ২১ লাখ টাকা।

চসিকের চার প্রকল্প : চসিকের প্রকল্পগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে ৬৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোশনের আওতাধীন পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্পে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা, বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খালখনন প্রকল্পে ১৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও বাসট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

সিডিএ’র ছয় প্রকল্প : সিডিএ’র প্রকল্পগুলোর মধ্যে সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পে (পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত চতুর্থ সংশোধিত) ২৫০ কোটি টাকা, লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে ১৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে ৩০০ কোটি টাকা, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পে (১ম সংশোধিত) ৯৬০ কোটি টাকা ৮২ লাখ টাকা, প্রিপারেশন অব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান (২০২০২০৪১) প্রকল্পে ৯ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন গুচ্ছ প্রকল্পে ৩৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম ওয়াসার দুই প্রকল্প : চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্পগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পে (প্রথম পর্যায়) ৬২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পে (ক্যাচমেন্ট ২ ও ৪) ৬৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন প্রকল্পে বরাদ্দ ১১২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের দুই প্রকল্প : চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে (চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অংশ এবং দ্বিতীয় সংশোধিত) ১ হাজার ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং একই প্রকল্পে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর অংশে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

অন্যান্য : পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে’ ৩১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের ৩৬টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পে ২৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। নাবিক ও প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিদপ্তরের সীম্যান্স হোস্টেল কমপ্লেঙ ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে আগত বিদেশি নাবিকদের সাময়িক আবাসন ও বিনোদন সুবিধা দিতে এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকমতে পারে যেসব পণ্যের দাম
পরবর্তী নিবন্ধবাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম