অনুদানভুক্ত ১৫১৯টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক। শাহবাগে শিক্ষকদের অবস্থানস্থলে এসে তিনি বলেছেন, আপনাদের ওপর পুলিশের জলকামান ও লাঠিচার্জের নিন্দা জ্ঞাপন করেছি। আপনাদের বঞ্চনার লাঘব হয়েছে। আপনাদের ছয় দফা দাবিসহ আরও বেশ কিছু কাজ করেছি। অতিরিক্ত কাজ করেছি। প্রথম দফা সকল প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের বিষয়টি; সকল এবতেদায়ী মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। ছয় দফার সব মেনে নেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সাল থেকে আমরা এমপিওর কাজ শুরু করব। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে যুগ্ম সচিব মাসুদুল হক এ ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে সচিবালয়ে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলরতদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এদিকে জাতীয়করণসহ অন্যান্য দাবির আশ্বাস পেয়ে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকেরা। তাদের কেউ কেউ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
বৈঠক থেকে বের হয়ে শাহবাগে এসে স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল আসতেছে। আমাদের বলেছে, আপনাদের দাবি দাওয়া যৌক্তিক। এর পরপরই যুগ্ম সচিব মাসুদুল হক শাহবাগে এসে জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের প্রথম দফাতে জাতীয়করণের যে দাবি ছিল, আমরা সকলের সাথে কথা বলে একমত হয়েছি যে, বাংলাদেশের সকল স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হবে। দ্বিতীয় দাবি ছিল, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার রেজিস্টেশনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা। আমরা ২০২৫ সালে এবতেদায়ী মাদ্রাসার যে এমপিওভুক্তির তালিকা করেছি তা পর্যালোচনার পর্যায়ে আছে। আমরা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এটা দাখিল করতে বলেছি এবং মার্চ মাসের মধ্যে আমরা চালু করব এবং স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হবে। তিন নম্বর ছিল, রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদ্রাসাগুলোকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অন্তর্ভুক্তকরণ, এটা আমরা ২০২৫ সালের জুন থেকে করব।
মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের এ যুগ্ম সচিব বলেন, চার নম্বরে ছিল, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা বেতনভাতা নীতিমালা ২০২৪ অনুমোদন করা; আমরা নীতিমালা ২০২৫ ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছি, ফাইনাল খসড়া ৩১ মার্চের মধ্যে অনুমোদন করে চালু করব। পাঁচ নম্বর ছিল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় অফিস সহায়ক নিয়োগ করা, আমাদের ঘোষণাপত্রে অফিস সহায়কের পদ সৃষ্টি হবে। ছয় নম্বরে ছিল, প্রাথমিকের মতো প্রাকপ্রাথমিক শ্রেণি চালু করা। আমরা প্রাকপ্রাথমিক চালু করার জন্য ইতোমধ্যে নীতিমালা ২০২৫ এ অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছি, প্রাক প্রাথমিকের জন্য একজন শিক্ষকেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অনুদানভুক্ত ১৫১৯টি স্বতন্ত্র মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা তিন হাজার টাকা করে অনুদান পেয়ে থাকেন। এর বাইরে আরও ৫ হাজার ৯৩২টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে, যেগুলো সরকারি কোনো অনুদান পায় না।
অনুদানভুক্ত মাদ্রাসাগুলোকে কোন প্রক্রিয়ায় জাতীয়করণ করা হবে জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক বলেন, আগে এমপিওভুক্তি করে তারপরে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করতে হবে। একটা আইন করতে হবে, তখন জাতীয়করণ করা হবে। এমপিওভুক্তির কাজ চলতি বছরের জুন থেকে শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আর জাতীয়করণ শুরু হবে ২০২৬ এবং ২০২৭ এর মধ্যে মোটামুটি সব কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
জাতীয়করণ হলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী ধরনের সুবিধা মিলবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে মাসুদুল হক বলেন, উপবৃত্তি চালু হবে, মিডডে মিল এবং অবকাঠামোগত উন্নয় শুরু হবে।