চট্টগ্রামে অনুশীলনে গতকাল বুধবার শিডিউল ছিল দুর্বার রাজশাহী এবং চিটাগাং কিংসের। স্বাগতিক দলের শিডিউল ছিল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। আর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে রাজশাহীর অনুশীলনের কথা ছিল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ আগে অনুশীলন বাতিল করে দেয় তারা। দল থেকে বলা হয়, এদিনও বিশ্রামে থাকবেন ক্রিকেটারা। নানা কৌতূহল জন্ম নেয় তখনই।
পরে জানা গেল, পারিশ্রমিক না পেয়ে অনুশীলন বয়কট করেছেন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্ব শুরুর আগে প্রকাশ্যে এসেছে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না পাওয়ার খবর। টুর্নামেন্ট প্রায় মাঝপথে চলে এলেও এখনও টাকা পাননি রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। খুলনা টাইগার্স ও চিটাগং কিংস দল থেকেও শোনা গেছে একই অভিযোগ। তবে এই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষ থেকে মিলেছে সমাধানের আশ্বাস।
জানা গেছে, রাজশাহীর ক্রিকেটাররা এখনও পর্যন্ত পারিশ্রমিকের এক টাকাও না পাওয়ায় অনুশীলন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি সমাধান না পেলে আগামীকাল শুক্রবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ম্যাচও না খেলার হুমকি দিয়েছেন তারা। দলটির কয়েকজন ক্রিকেটারের কাছ থেকে জানা যায়, ছয় ম্যাচ খেলে ফেললেও বেশিরভাগ স্থানীয় ক্রিকেটার পারিশ্রমিকের কোনো টাকা পাননি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, গত ১০ দিনের দৈনিক ভাতাও (ডিএ) পরিশোধ করা হয়নি তাদের। বিদেশি ক্রিকেটার ও কোচিং প্যানেলের সদস্যদের ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক অবশ্য দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। বিপিএলের পারিশ্রমিক নীতিমালা অনুযায়ী, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। টুর্নামেন্ট চলাকালে দিতে হবে আরও ২৫ শতাংশ অর্থ। আর খেলা শেষ হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে হবে বাকি ২৫ শতাংশ। কিন্তু এবার বেশিরভাগ দল এই নিয়মের তোয়াক্কা করেনি।
পারিশ্রমিক না পাওয়া নিয়ে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচের পর রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হককে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন তিনি কোনো অভিযোগ করতে চাননি। তিনি বলেছিলেন, আমরা এখনও পারিশ্রমিক পাইনি। কেউই পায়নি। মাত্র শুরু হয়েছে বিপিএল। আমরা আসলে কোনো প্রশ্ন বা কোনো জটিলতা না তুলি। ক্রিকেটাররাও এটা চাই না। বিপিএল বিশ্বের সবাই দেখে। এরকম কোনো খবর না আসুক বা আমাদের দেখতে না হোক বিশ্ব ক্রিকেটে পারিশ্রমিক না পাওয়া নিয়ে কোনো খবর এসেছে। সেই এনামুলরাই এখন পারিশ্রমিক না পেয়ে অনুশীলন না করার মতো সিদ্ধান্ত নিলেন। দলটির মিডিয়া ম্যানেজার জানিয়েছেন, পারিশ্রমিকের বিষয়টি উচ্চতর কর্তৃপক্ষ দেখভাল করছে। এই বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
এদিকে খুলনা ও চিটাগং দলের একাধিক ক্রিকেটারের কাছ থেকেও পাওয়া যায় একই অভিযোগ। আজ বৃহস্পতিবার নিজেদের শহরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগের দিন অনুশীলনও করেনি চিটাগং। তবে সেটি বকেয়া পারিশ্রমিকের কারণে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ক্রিকেটারদের টাকা নিয়ে সমস্যার বিষয়টি মেনে নেন চিটাগংয়ের টিম ম্যানেজার মোহাম্মদ লাবলুর রহমান। তিনি বলেন, একেক ক্রিকেটার পেয়েছেন একেক পরিমাণে অর্থ। আমাদের সব ক্রিকেটারই পারিশ্রমিকের কিছু না কিছু অংশ পেয়েছে। সবাই একইরকম অর্থ না পাওয়ায় মূলত একটা সংশয় তৈরি হয়েছে। বিদেশি ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই ৭৫ শতাংশ পেয়ে গেছে। দেশিদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম একই পরিমাণ অর্থ পেয়েছে। বাকিদের পারিশ্রমিকের বিষয়টা আমরা চট্টগ্রামে এসেই বলে দিয়েছি দুই–এক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। এরই মধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আশা করছি বৃহস্পতিবার (আজ) আমাদের সব ক্রিকেটার চেক বুঝে পাবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চিটাগংয়ের প্রতিপক্ষ খুলনা। আগের দিন পুরো দমে অনুশীলন করেছেন খুলনার ক্রিকেটাররা। পরে অভিযোগ পাওয়া যায়, এখনও পারিশ্রমিক পাননি দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটার। ফ্র্যাঞ্চাইজির কর্ণধার ইকবাল আল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরবর্তী ম্যাচের আগেই ৫০ শতাংশ অর্থ পেয়ে যাবেন সব ক্রিকেটার। আমাদের দলের পারিশ্রমিক নিয়ে তো আসলে সমস্যা নেই। গত মঙ্গলবার থেকেই ক্রিকেটারদের বকেয়া টাকা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। আজকে অনেকেই টাকা পেয়ে গেছে। দুই–একজন যারা বাকি আছে, বৃহস্পতিবার ম্যাচের আগেই সমাধান হয়ে যাবে।