সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া তার ছেলে জারিফ হামিদ ও স্ত্রী সীমা হামিদের নামেও দুদক আলাদা মামলা করেছে। সেসব মামলায়ও আসামি হিসেবে নসরুল হামিদ বিপুর নাম রয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার মামলা তিনটি দায়ের করার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
বিপুর বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বশীল পদে থেকে তিনি ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন, যা তার আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এছাড়া, বিপু তার নিজের ৯৮টি ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩১৩ টাকা জমা ও ৩ হাজার ১৩০ কোটি ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৯ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এটি অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধ। দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে পাওয়া এ অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার জন্য তিনি সেই অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, এ কাজ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিপুর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিপুর ছেলে জারিফ হামিদের বিরুদ্ধে মামলায় ২০ কোটি ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার ২০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জারিফ হামিদ তার বাবা নসরুল হামিদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রভাব ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে জানা আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া, জারিফ তার ২০টি ব্যাংক হিসাবে ২৭ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩১ টাকা জমা ও ১৭ কোটি ৪০ লাখ ৮৩ হাজার ৪৯৭ টাকা উত্তোলন করেছেন, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, জারিফ অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধ করেছেন। দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার জন্য তিনি সেই অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, নসরুল হামিদ বিপু তার প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছেলে জারিফ হামিদকে সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন, যা বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এর মধ্য দিয়ে বিপু দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
বিপুর স্ত্রী সীমা হামিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, স্বামীর ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রভাব ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে তিনি ৯৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯০২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন, যা তার জানা আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এজাহারে বলা হয়েছে, সীমা হামিদ তার ২০টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৯ টাকা জমা ও ১১ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৮ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। সীমার বিরুদ্ধেও অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধের অভিযোগ এনেছে দুদক।
সীমার বিরুদ্ধে করা মামলায় বিপুর বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রভাব ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে স্ত্রীকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন, যা দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।