উৎসাহ–উদ্দীপনা এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন। এতে সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন–মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ পরিষদ বিপুল ভোটের ব্যবধানে পূর্ণ প্যানেলে জয়লাভ করেছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। নির্বাচনে ৯ হাজার ৭৪৪ জন লাইফ মেম্বার ভোটারের মধ্যে ৩৬৫২ জন এবং ডোনার মেম্বারের ৩৯৪ জন ভোটারের মধ্যে ১৬০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সর্বোচ্চ ২৮১৯ ভোট পেয়েছেন জেনারেল সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ।
মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে এবার দুটি পৃথক প্যানেল ছাড়াও লড়েন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর মধ্যে সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ, লায়ন অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্ল্যাহ ও রেজাউল করিম আজাদ প্যানেল এবং প্রফেসর কামরুন নেছা (রুনা), ডা. এম মাহফুজুর রহমান ও ডা. এম এ মান্নান প্যানেলে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবেও কয়েকজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দুই প্যানেল এবং স্বতন্ত্র মিলে ৬৫ জন প্রার্থীর মধ্যে তিনজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় বাকি ৬২ জন নির্বাচনের মাঠে ছিলেন।
নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন ২৫৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. কামরুন নেছা (রুনা) পেয়েছেন ৯৬৪ ভোট। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মোরশেদ–আজাদ প্যানেলের আবদুল মান্নান রানা ২৭৯৪ ভোট, ডা. মোহাম্মদ পারভেজ ইকবাল শরীফ ২১৬২ ভোট এবং ডা. এ কে এম ফজলুল হক ২১১৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ পদে অপর প্যানেলের ডা. শাহানা বেগম পেয়েছেন ১৭৫৩ ভোট এবং আবুল হোসেন পেয়েছেন ১০১৫ ভোট। জেনারেল সেক্রেটারি পদে ২৮১৯ ভোট পেয়ে মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. এম মাহফুজুর রহমান পেয়েছেন ৭২৪ ভোট। ট্রেজারার পদে লায়ন ড. মোহাম্মদ সানাউল্ল্যাহ পেয়েছেন ২৩৬৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. এম এ মান্নান পেয়েছেন ১১৪৯ ভোট। অর্গানাইজিং সেক্রেটারি পদে মোরশেদ–আজাদ প্যানেলের মোহাম্মদ সাগির ২৫৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. মোহাম্মদ সাহাদাত হোসাইন পেয়েছেন ১০১৩ ভোট। জয়েন্ট ট্রেজারার পদে মোরশেদ–আজাদ প্যানেলের লায়ন এস এম কুতুব উদ্দিন ২৩৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম পেয়েছেন ১১৫৫ ভোট। স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল সেক্রেটারি পদে মোরশেদ–আজাদ প্যানেলের ডা. ফজল করিম বাবুল ২৬৩৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী এম জাকির হোসেন তালুকদার পেয়েছেন ৮৮৬ ভোট।
১০ জন সদস্য পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪২ জন। এদের মধ্যে মোরশেদ–আজাদ প্যানেলের মোহাম্মদ আবুল হাশেম ১৬৪৭ ভোট, ডা. মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন ১৮১০ ভোট, ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ ১৬৭১ ভোট, মোহাম্মদ ইব্রাহিম চৌধুরী ১৫২৭ ভোট, তারিকুল ইসলাম তানবির ১৯৩৬ ভোট, ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ঢালী ১৭১৪ ভোট, ডা. এটিএম রেজাউল করিম ১৬২৭ ভোট, ডা. শাহনেওয়াজ সিরাজ ১৬৭১ ভোট, মোহাম্মদ সাইফুল আলম ১৭৪১ ভোট এবং ডা. মোহাম্মদ সারোয়ার আলম ১৬৭২ ভোট পেয়ে ইসি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অপু বড়ুয়া ৫৪৮ ভোট, মোহাম্মদ আবদুর রহমান খোকন ৩২১ ভোট, মোহাম্মদ আবদুল হাই মাসুম ৭৭৩ ভোট, আবু আহমেদ হাসনাত ১০১৬ ভোট, ডা. মোহাম্মদ আবু নাছের ১০৫০ ভোট, মোহাম্মদ আব্দুস সবুর ৭০১ ভোট, মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ২৮৩ ভোট, মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম ১৭৯ ভোট, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান মাসুদ ৩৯১ ভোট, মুহাম্মদ নুমান আসকারী দীদার ৪৩০ ভোট, লায়ন নুর আহাম্মদ পিন্টু ৪৪৫ ভোট, নুরুল আনোয়ার ৪২৫ ভোট, মোহাম্মদ নুরুল আলম ২৮০ ভোট, মোহাম্মদ ফজলুল করিম মজুমদার ৫৬৯ ভোট, কে এম ফজলে এলাহী টিপু ৪২৫ ভোট, ফারুক আহাম্মদ ৮০৫ ভোট, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মুন্সী ৪২৭ ভোট, মাসুদুল আলম ২৩২ ভোট, ম. মাহমুদুর রহমান শাওন ১০৮৪ ভোট, মুহাম্মদ মুবিনুল হক ১৬৩ ভোট, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ভূঁইয়া ৩৩৫ ভোট, ডা. খায়রুল আনোয়ার ৭৩৩ ভোট, গোলাম বাকী মাসুদ ৭১৩ ভোট, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ১৯৭ ভোট, মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম ৭৬৪ ভোট, হাজী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ৮০৫ ভোট, অ্যাডভোকেট রিদওয়ানুল বারী ৩০৪ ভোট, প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ রেজাউল করিম ৮৪৩ ভোট, সাইফুদ্দৌলা সিকদার শিমুল ২৯৭ ভোট, মোহাম্মদ সোলায়মান হোসেন বাচ্চু ২৭২ ভোট, মোহাম্মদ নাঈম উদ্দিন ২৮৬ ভোট এবং মোহাম্মদ হারুন অর রসিদ ৩৯৭ ভোট পেয়েছেন।
ডোনার মেম্বারের দুটি পদে মোরশেদ–আজাদ প্যানেলের লায়ন মোহাম্মদ হারুন ইউসুফ ১৪৮ ভোট এবং ইঞ্জিনিয়ার লায়ন মোহাম্মদ জাবেদ আবছার চৌধুরী ১৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এই পদে অপর প্যানেলের ডা. দুলাল দাশ পেয়েছেন ৩১ ভোট।
এদিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডোনার) পদে মোরশেদ–আজাদ প্যানেলের ডা. কামরুন নাহার দস্তগীর, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি (ডোনার) পদে মোহাম্মদ শহীদ উল্ল্যাহ এবং জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি পদে জাহিদুল হাসান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
কার্যকরী পরিষদের ২৪টি লাইফ মেম্বারের ভোটে ২০টি এবং ডোনার মেম্বারের ভোটে ৪টি মিলে মোট ২৪ পদ থাকলেও তিনটি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় লাইফ মেম্বার ভোটাররা প্রেসিডেন্ট পদে একটি, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তিনটি, জেনারেল সেক্রেটারি পদে একটি, ট্রেজারার পদে একটি, জয়েন্ট ট্রেজারার পদে একটি, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি পদে ১টি, স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল সেক্রেটারি পদে একটি, সদস্য পদে ১০টি মিলে সর্বমোট ১৯টি ভোট এবং ডোনার মেম্বাররা একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় শুধু ডোনার সদস্য পদে ২টি ভোট প্রদান করেছেন। হাসপাতালের পুরনো ভবন এবং মহিলা হোস্টেল ভবনে স্থাপিত ৩৩টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও আগে থেকেই প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা মা ও শিশু হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। ভোটারদের অনেকে ভোট শুরু হওয়ার আগেই লাইনে দাঁড়ান। প্রার্থী, ভোটার, সমর্থক এবং উৎসাহী মানুষ মিলে পুরো হাসপাতাল প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে মানুষের উপস্থিতি। নির্বাচন ঘিরে মিলনমেলায় পরিণত হয় হাসপাতাল অঙ্গন। হাসপাতালের সামনের রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রার্থী, তাদের স্বজন ও কর্মী–সমর্থকরা ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা, লিফলেট বিতরণ করতে থাকেন। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা, কঠোর শৃঙ্খলা এবং শত শত লাইফ মেম্বার এবং ডোনার মেম্বারের উপস্থিতি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
বাইরে ভিড় থাকলেও প্রতিটি বুথে ভোটদানে দেখা গেছে শৃঙ্খলা। ভোটাররা বুথে প্রবেশের পর স্বস্তির সাথে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রতিটি বুথে একজন প্রিসাইডিং অফিসার, একজন পুলিং অফিসার ও একজন কেন্দ্র সহায়ক দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক পরিস্থিতি উৎসবমুখর রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। নির্বাচনে সৈয়দ মোরশেদ হোসেন–অধ্যক্ষ ড. লায়ন মোহাম্মদ সানাউল্লাহ–রেজাউল করিম আজাদ পরিষদ পূর্ণ প্যানেলে জয়লাভ করেছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রামের কিছু মানবহিতৈষীর উদ্যোগে ক্ষুদ্র পরিসরে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে ৯৫০ শয্যার এই হাসপাতালের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে ১০টি বিশেষ প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের ২১টি অন্তর্বিভাগ ও ৩০টি বহির্বিভাগে সাধারণ এবং বিশেষায়িত সেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটির ২১টি অন্তর্বিভাগে দৈনিক গড়ে ৮০০ থেকে ৮৫০ জন ভর্তি থাকে এবং ৩০টি বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে ২ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে অনন্য অবস্থান ধরে রেখেছে। পূর্ণাঙ্গ একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ছাড়াও সম্প্রতি ডেন্টাল চিকিৎসা কোর্স চালু করা হয়েছে। করোনাকালে চিকিৎসায় মা ও শিশু হাসপাতাল অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।