শীতে হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগী

চমেক হাসপাতালে শয্যার প্রায় চারগুণ রোগী মা ও শিশু হাসপাতালেও বেড়েছে চাপ

জাহেদুল কবির | শনিবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। নগরীর তুলনায় গ্রামাঞ্চলের দিকে মাত্রাটা একটু বেশি। শীত বাড়ার সাথে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে শিশুরা শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের আধিক্য থাকেই। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে রোগী ভর্তির পরিমাণ আরো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। চমেক হাসপাতাল ছাড়াও চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মাবাবারা বুঝতে পারেন না, তার শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুর সর্দিকাশিকে বেশিরভাগ অভিভাবক অবজ্ঞা করেন। পরে এক সময় সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জ্বরখিচুনি, নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিসে আক্রান্ত হয় বিভিন্ন বয়সী শিশুরা। গতকাল দুপুরে চমেক হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে স্থান সংকুলানের অভাবে এক বেডে একাধিক শিশুকেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া একটি অঙিজেন সঞ্চালন লাইন থেকে দুই বা ততোধিক শিশুকে অঙিজেন দেয়া হচ্ছে। এতে করে যে শিশুর বেশি পরিমাণ অঙিজেনের দরকার তার অঙিজেনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে বেডের সীমাবদ্ধতা। বর্তমানে ওয়ার্ডে অনুমোদিত বেড রয়েছে ৭৪টি। অথচ গতকাল ভর্তি রোগী ছিল প্রায় ২৯০ জন।

শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডের দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানান, বেড যে পরিমাণই থাকুক, আমরা তো কোনো রোগীকে আর ফেরত দিতে পারি না। রোগীর তুলনায় আমাদের চিকিৎসকেরও কিছুটা সংকট রয়েছে, তবে আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাচ্ছি।

ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে হাটহাজারী থেকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় ৩ বছরের শিশু মোহাম্মদ নাফিজকে। তার মা বলেছেন, গত দুইদিন শিশুটি ঠিক মতো খেতে পারছিল না। খাওয়ার পর পর বমি হচ্ছিল তার। এরসাথে শুরু হয় ডায়রিয়া। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অপরদিকে লোহাগাড়া থেকে ব্রঙ্কিওলাইটিসের সমস্যা নিয়ে ভর্তি করানো হয় এক বছর বয়সী শিশু সোলয়ামান আলমকে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তাই পরিবারের সদস্যরা দুইদিন আগে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত টিকাদান, স্বাস্থ্যকর জীবন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এই তিনটি বিষয় নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। অনেক অভিভাবক অজ্ঞতার কারণে অসুস্থ শিশুকে সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যান না। সময়ক্ষেপণ করার পর যখন অবস্থার অবনতি হয়, তখন হাসপাতালের দিকে ছুটেন। তাই শিশুর অসুস্থতাকে কোনোভাবে অবহেলা করা যাবে না।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সেঁজুতি সরকার বলেন, হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিস রোগীর পরিমাণ বেড়েছে। এখন মাত্র শীত শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে শীতের মাত্রা বাড়লে রোগী আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জেবীন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, শীত মৌসুমে শীতজনিত কিছু কিছু রোগের প্রকোপ বাড়ার কারণে রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। এছাড়া আমাদের ওয়ার্ডে প্রায় সময় রোগীর চাপ থাকে। এখন ব্রঙ্কিওলাইটিস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর পাশাপাশি ডায়রিয়ার রোগীরাও ভর্তি হচ্ছে। আমাদের দেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। সাধারণত যেসব শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের নিউমোনিয়া বেশি হয়। এছাড়া প্রিম্যাচিউরড (সময়ের আগে জন্ম নেয়া) শিশুদেরও নিউমোনিয়া বেশি হয়। পর্যাপ্ত আলো বাতাস ছাড়া স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশু নিউমোনিয়ার ঝঁকিুতে থাকে। তবে নিউমোনিয়া প্রতিরোধে শিশু জন্মের পর থেকে ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বুকের দুধে নিউমোনিয়া প্রতিরোধক ভিটামিন এ থাকে। ফিডারে কোনো কিছু খাওয়ানো যাবে না। নিয়মিত হাত ধোঁয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ঘরে বড় কারো সর্দি কাশি হলে শিশুদের তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া শিশুকে সরকার নির্ধারিত সব টিকা দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলে গেলেন প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ
পরবর্তী নিবন্ধরাজনৈতিক বিরোধিতাকে সন্ত্রাসবাদ বলে চালিয়েছে আ. লীগ সরকার