সেরা করদাতা পুরস্কার পাওয়া নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিন মাসুমকে তার প্রেমিকা ক্ষোভের বশে পরিকল্পিতভাবে খুনের পর লাশ ৭ টুকরো করে পূর্বাচলের লেকে ফেলে দেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। এর আগে দুপুরে ঢাকার শেওড়াপাড়া থেকে রুমা আক্তার নামে ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে জসিম হত্যাকাণ্ডে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসপি দাবি করেন, ১০ নভেম্বর রাতে শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাটেই জসিমকে খুন করেন রুমা। পরে তার মরদেহ টুকরো করে পলিথিন ব্যাগে ভরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের একটি লেকে ফেলে দেন। গ্রেপ্তার রুমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানায়। অবিবাহিত এই নারী শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় রুমার এক বান্ধবীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান এসপি। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে বুধবার দুপুরে কুড়িল–কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশে পূর্বাচল উপশহরের ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেক থেকে তিনটি পলিথিন ব্যাগে মোড়ানো ৭ খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাতে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে মরদেহটি জসিমউদ্দিনের বলে শনাক্ত করে তার পরিবারের সদস্যরা।
৫৯ বছর বয়সী জসিমউদ্দিন মাসুমের পৈত্রিক বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায়। সেরা করদাতার পুরস্কার পাওয়া এ ব্যবসায়ী পরিবারের সঙ্গে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকতেন। তার পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, জসিমউদ্দিন ১০ নভেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। পরে ১১ নভেম্বর তার নিখোঁজের বিষয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পরিবার।
নিহতের ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম সিহাব বলেন, রোববার বিকেলে বাবা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। গুলশানে গাড়িটি ছেড়ে দেন এবং অন্য আরেকটি গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ কারখানায় যাবেন বলে ড্রাইভারকে জানান। এরপর রাত সাড়ে ১১টাও মায়ের সঙ্গে ফোনে বাবার কথা হয়। কিন্তু তিনি আর রাতে ফেরেননি। পরদিন সকাল ৭টার দিকে তার দুটো নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কারও সঙ্গে জসিমউদ্দিনের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক সূত্রে শত্রুতা ছিল কিনা তা নিশ্চিত নন তার ছেলে সিহাব। বিকালে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার দাবি করেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তারা চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রেমিকা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও হেসকো ব্লেডও উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার রুমার সঙ্গে নিহত ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিনের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ওই নারীর ফ্ল্যাটে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাকে বিয়ে করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন জসিম। কিন্তু বিয়ে নিয়ে বিলম্ব করায় ক্ষুব্ধ ছিলেন রুমা। এরমধ্যে অপর এক নারীর সঙ্গেও জসিমের সম্পর্ক আছে জানতে পেয়ে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তাকে খুন করার পরিকল্পনা করেন রুমা।
১০ নভেম্বর রাতে রুমা জসিমউদ্দিনকে তার ফ্ল্যাটে ডেকে নেন। সেখানে তাকে ড্রিংকসের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে খাওয়ান রুমা। অচেতন অবস্থাতেই ধারালো চাপাতি চালিয়ে জসিমকে হত্যা করেন তিনি। পরে তার মরদেহ টুকরো করে পলিথিন ব্যাগে ভরে তা পূর্বাচলের লেকে ফেলে আসেন বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। এসপি বলেন, পুরো কাজটি তিনি (রুমা) একাই করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। লাশগুলো লেকে ফেলার জন্য পরিবহন হিসেবে সিএনজি ও উবার ব্যবহার করেন। একাধিক দফায় সে লাশগুলো নিয়ে গিয়ে লেকে ফেলেন।
রুমাকে শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, হেসকো ব্লেড বনানীর আরেকটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের পরনের সাফারি (স্যুট) ও এক জোড়া জুতাও পাওয়া গেছে বলে জানান এসপি। তাছাড়া, গ্রেপ্তার আসামির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পূর্বাচল থেকে নিহতের শরীরের আরও কিছু অংশ পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে জানান তিনি। এই ঘটনায় ওই নারীকে অন্য কেউ সহযোগিতা করেছিলেন কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান প্রত্যুষ কুমার। তবে পুলিশের এসব তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নিহতের ছেলে সিহাব বলেন, এই বিষয়ে কোনোকিছু তাদের জানা নেই। তিনি তার পিতার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
এদিকে, খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের পর গতরাতে রূপগঞ্জ থানায় এই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের পরিচয় পাওয়া আগে পুলিশ বাদী হয়ে করা ওই মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছিল। ওই মামলায় রুমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার।