নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থাকে একসাথে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, কেবল হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প করে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। দরকার সবগুলো সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করা। প্রকল্পের পাশাপাশি জনসচেতনতা, পরিবেশ রক্ষা ও পরিকল্পিত নগরায়নও জরুরি। গতকাল মঙ্গলবার টাইগারপাস চসিক কার্যালয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বিষয়ে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম। সভায় জানানো হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান সিডিএর মেগা প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ। শাহাদাত বলেন, খাল–নদী রক্ষায় আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন। আমি বাকলিয়ায় কৃষিখালে গিয়ে দেখলাম খালটা যেন ডাম্পিং স্টেশন হয়ে গেছে। অথচ বাকলিয়া এলাকার জলাবদ্ধতার পানি নিরসনে খালটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চাক্তাই খালেরও অনেক স্থানে ৭–৮ তলা বিল্ডিং হয়ে গেছে। অন্যান্য খালেও দখল ও বর্জ্য নিয়ে একই সমস্যা রয়েছে; যা শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে এবং কর্ণফুলীকেও হত্যা করছে। এজন্য আমার মনে হয় প্রয়োজনে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসাকে ভূমিকা রাখতে হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ে আমার বিকল্প কিছু পরিকল্পনা আছে। বর্ষাকালে অতিরিক্ত যে পানিটা আসে সেটা যদি আমরা সংরক্ষণ করতে পারি; অতিরিক্ত পানি যেগুলো নালাতে চলে যাচ্ছে সেগুলো সংরক্ষণ হলে জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে এবং মাটির নিচের পানির স্তরও রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন, সিডিএরও উচিত বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে বাড়ি করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা। কারণ পানি মাটির নিচে না যেতে পারায় কিন্তু ভূমি ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে এবং ভূমিকম্প ও ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমি হোল্ডিং ট্যাঙ বাড়াব না। তবে যারা নিয়ম মানছে না, আইনের মধ্যে চলছে না অথবা সুন্দর শহর গড়ার আমাদের যে প্রত্যয় সেটার বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং যারা নালা–খাল দখল করে তাদের জরিমানা করব।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প দ্রত এগিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনসহ জনস্বার্থে সব বিষয়ে চসিকের সাথে সিডিএ একযোগে কাজ করবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। ময়লার এসটিএস নির্মাণ করার জন্য কোথাও ভূমির প্রয়োজন হলে সিডিএকে জানালে বিবেচনা করা হবে। বর্তমানে সিডিএ ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি খালের কাজ করছে। বাকি ২১টি খাল আদৌ বেঁচে আছে কিনা, থাকলে সেগুলো কীভাবে উদ্ধার করা যায় তা জানতে বাকি খালগুলো নিয়েও সমীক্ষা প্রয়োজন।
সভায় বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম এবং সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ এ এম হাবিবুর রহমান ও চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম।
লে. কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ বলেন, প্রকল্পটির কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা তুলনামূলক কম স্থানে হয়েছে এবং জমাটবদ্ধ পানি দ্রুত অপসারিত হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাজের অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ। খাল দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল উদ্ধার করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই প্রকল্প দ্রত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা খাল খনন করলেও পানি শহর থেকে নালার মাধ্যমে খালে আসতে হবে। যত্রতত্র পলিথিন ও ময়লা ইত্যাদি ফেলে নালা ভরাট করে ফেললে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। কর্ণফুলীর তলদেশও এ কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য জনগণকে সচেতন করার জন্য ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে পাহাড় রক্ষাও জরুরি। একটি অসাধু চক্র বর্ষার আগে পাহাড়ে এমনভাবে মাটি কাটে, যাতে বৃষ্টি হলে পানির সাথে পাহাড় ধসে যায়। এই মাটি পরে নালায় গিয়ে নালা জ্যাম করে ফেলে। এজন্য পাহাড় রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়েও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।