লিংক পাঠিয়ে কৌশলে ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইলিং’

| মঙ্গলবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

গত দুই বছরে অর্ধশতাধিক ফেসবুক আইডি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অন্তত ১৫ জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মো. ফজলে হাসান অনিক নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসিআইডি।

গত রোববার ঢাকার উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ২৪ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী ফেসবুক হ্যাকিংকে ‘পেশার পর্যায়ে’ নিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের ডিআইজি এস এন মো. নজরুল ইসলাম। গতকাল ঢাকার মালিবাগ সিআইডি সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ফেসবুকে বিভিন্ন লিংক পাঠিয়ে আইডিপাসওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণে নিতেন অনিক। তারপর মেসেঞ্জারের ব্যক্তিগত কথোপকথন ও ছবি হাতিয়ে নিয়ে পরিচিতদের পাঠানোর ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে আদায় করতেন টাকা। খবর বিডিনিউজের।

পুলিশি ঝামেলা এড়াতে অনিক সরাসরি বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিতেন না। বিভিন্ন সুপারশপে কেনাকাটা করে ভুক্তভোগীদের মাধ্যমে পরিশোধ করাতেন। কখনও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে টাকা আদায় করতেন বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। ভুক্তভোগী এক নারীর অভিযোগের পর অনিককে শনাক্ত করা হয়। তার বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাও ইউনিয়নের নেংটাদাহ গ্রামে। বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল শাস্ত্রে পড়াশোনা করছেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করা হয়েছে জানিয়ে ডিআইজি নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর অগাস্টে ভুক্তভোগীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে একটি লিংক পাঠান অনিক। ওই লিংকে ক্লিক করে ফেসবুক ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিলে আইডি চলে যায় অনিকের দখলে। এরপর সে ভিকটিমের ফেসবুকের ম্যাসেজার থেকে কিছু ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে অনিক সেসব ছবি ও ভিডিও স্বজন ও পরিচিত লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কয়েক ধাপে টাকা হাতিয়ে নেয়। যখনই টাকার দরকার হত, তখনই ভিকটিমকে ব্ল্যাকমেইল করা অনিকের টার্গেট ছিল সাধারণত মেয়েরা।

সিআইডির ভাষ্য, কোনো মেয়ের আইডি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে তার লিস্টের মেয়েদেরও টার্গেট করতেন অনিক। পরিচিতদের কাছ থেকে লিংক এসেছে ভেবে কেউ ক্লিক করলেই তার আইডিও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতেন তিনি। এভাবেই অনিক ঢাকায় নিজের খরচ মেটাতেন বলেও জানারো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

ভার্চুয়াল জগতে কোনো কিছুই ‘ব্যক্তিগত’ নয় মন্তব্য করে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা কোনও অ্যাপ বা মাধ্যমে যে তথ্য বা ছবি দিচ্ছি সেগুলো কয়েক হাত ঘুরে সংশ্লিষ্ট অ্যাপের সার্ভারে যাচ্ছে। তাই ভার্চুয়াল মাধ্যমে এমন কোনো কন্টেন্ট বা ছবি দেওয়া উচিত নয়, যাতে আমি বা আমার পরিবারকে বিব্রত হতে হবে। যাচাই না করে কোন লিংকে ক্লিক করা যাবে না। অনিক এখন পর্যন্ত কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে আমাদের কাছে এক লাখ টাকার মত হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তথ্য পেলে এই সঠিক সংখ্যাটা জানা যাবে। তাকে আমরা রিমান্ডে নিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে পারবো।

অভিযোগ পেলেই সিআইডি ব্যবস্থা নেয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনে আমলযোগ্য নয়, এমন ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সময় সরাসরি কিছু করার থাকে না। এক্ষেত্রে কেউ জিডি করলে, থানা থেকে যদি আদালতে প্রতিবেদন দেয়, পরে আদালতের নির্দেশে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, সেজন্য আমি ভুক্তভোগীদের সরাসরি আদালতে গিয়ে একটা পিটিশন করতে বলব। যদিও আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় বিষয়টা এত সহজ না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাড়ি থেকে ১৮ লাখ টাকার কেমিক্যাল চুরির সময় আটক ১০
পরবর্তী নিবন্ধ২ শিক্ষক, ৭ কর্মকর্তা কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত