জ্ঞাতি সম্মিলনের মহা মিলনমেলা

রাসু বড়ুয়া | শুক্রবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

দানের অপর নাম ত্যাগ। নিঃস্বার্থভাবে কিছু দেওয়া বা ত্যাগ করাকে দান বলা হয়। দান বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সর্বত্র বিরাজমান এবং সর্বধর্মে প্রশংসিত গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম। দানের দ্বারা ব্যক্তি বিশেষের পূণ্য সঞ্চিত হয়। এই সঞ্চিত পূণ্য পরলোকের একমাত্র সম্বল।

দান করা বাঞ্চনীয়। দানের সঠিক ফলাফল জেনে কর্মফলে বিশ্বাস করে দান করা কর্তব্য। দান করার সময় যারা সন্তোষের সাথে সাধুবাদ দিয়ে অনুমোদন করেন এবং যারা উৎসাহের সাথে কায়িক পরিশ্রমের দ্বারা দান কার্যে সহায়তা করেন তারাও পূণ্যাংশের ভাগী হন।

বৌদ্ধ হিসাবে ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা বহুবিধ দানকার্য সম্পাদন করে থাকি। এই দানকার্যের মধ্যে কঠিন চীবর দান সর্বোত্তম দান হিসাবে স্বীকৃত। ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত অধিষ্ঠান শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন হতে কার্তিকী পূর্ণিমার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত এক মাসের মধ্যে যে কোনো দিন কঠিন চীবর দান করা যায়। বছরের যে কোনো সময়ে এ দান করার কোনো বিধান নেই। অনেক ধর্মীয় বিধি বিধান (বিনয়) মেনে কঠিন চীবর দানকার্য সম্পাদন করা হয় বলেই এই দানকে দানোত্তম, দানশ্রেষ্ঠ বা দানরাজা বলা হয়।

গৌতম বুদ্ধ শ্রাবস্তীর জেতবনে অনাথ পিন্ডিকের আরামে অবস্থান করছিলেন। সে সময় কোশল রাজ্যের পশ্চিমে অবস্থিত পাথেয়বাসী ত্রিশজন আরণ্যক, পিণ্ডপাতিক, পাংসুকুলিক ও ত্রিচীবরিক ভিক্ষু বুদ্ধকে দর্শন করার মানসে বাহির হন। পথিমধ্যে তাহারা শ্রাবস্তী হতে ছয় যোজন দূরে অবস্থান করা অবস্থায় বর্ষাবাস সমাগত হলে মহাশ্রেষ্ঠী ধনকুবের মেণ্ডকপুত্র ধনঞ্জয় শ্রেষ্ঠীর নির্মিত সাকেত নগরের বিহারে বর্ষাবাস আরম্ভ করেন। তাঁরা উৎকন্ঠিত চিত্তে বর্ষাবাস যাপন করে প্রবারণা কর্ম সম্পাদন করে বুদ্ধকে দর্শনের মানষে রওনা হলেন। বর্ষার ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্লান্তশ্রান্ত কর্দমাক্ত চীবরে অবশেষে তথাগতের সম্মুখে উপস্থিত হলে যথারীতিতে অভিবাদন পূর্বক একপাশে বসলেন। তথাগত বুদ্ধ আগন্তুক ভিক্ষুদের কুশলাকুশল জিজ্ঞাসার প্রত্যুুত্তরে তাঁরা তথাগতকে দর্শনের বিড়ম্বনার কথা সবিস্তারে বললেন। অতঃপর ভগবান বুদ্ধ একটি নিয়ম প্রবর্তন করার মানসে ভিক্ষুগণকে আহ্বান করে কঠিন চীবর দানের প্রবর্তন করেন। তখন হতে কঠিন চীবর দানের প্রথা প্রবর্তন হয়।

বিহারের বর্ষাবাস গ্রহণকারী ভিক্ষু ব্যতীত কমপক্ষে পাঁচজন ভিক্ষুর সম্মুখে ত্রিচীবর বা এদের যে কোনো একটি দিয়ে এই দান করা হয়। চীবর সেলাই করা বা ক্রয় করা হোক অথবা দিনে দিনে সেলাই বা তৈরি করা হোকদান দেওয়া যায়। মূলতঃ প্রবারণার পরদিন থেকে বর্ষাবাস গ্রহণকারী ভিক্ষুকে কঠিন চীবর দান দিতে মহা সাড়ম্বরে দানোৎসব উদযাপনের জন্য ঐ বিহারের দায়কদায়িকারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে থাকেন।

কঠিন চীবর দানের সময় ‘ইমং কঠিন চীবরং ভিক্‌খু সঙ্ঘস্‌স দেম, কঠিনং অত্থরিতুং’ অর্থাৎ এই কঠিন চীবরখানি ভিক্ষু সংঘকে দান দিচ্ছি কঠিনে পরিণত করার জন্য। এই বাক্য তিনবার বলে দান দিতে হয়। তারপরে ভিক্ষুগণ তা ভিক্ষুসীমায় নিয়ে বিহারবাসী ভিক্ষুর নাম উল্লেখ পূর্বক শুদ্ধভাবে কর্মবাক্য পাঠ করে চীবরখানি কঠিনে পরিণত করেন। সেইদিন দায়কদায়িকাগণ কঠিন চীবর উপলক্ষে যা কিছু দান করবেন তা সমস্তই কঠিন চীবর দানের অংশ হিসাবে কঠিন চীবর লাভী ভিক্ষুর প্রাপ্য বলে বিবেচিত হয়। কঠিন চীবর দানের ফল বর্ণনা করতে গিয়ে ভগবান বুদ্ধ বলেছেনকোনো দাতা বিভিন্ন প্রকার দানীয় বস্তু যদি শত বৎসর যাবৎ দান করেন তবে সেই দান কঠিন চীবর দানের ষোল ভাগের একভাগ হয় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কলেজে যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধট্রাফিক কন্ট্রোল এবং ট্রাফিক আইনের বাস্তবায়ন জরুরি