ব্যবসায় কোথায় বৈষম্য তা খুঁজে বের করতে হবে ব্যবসায়ীদেরকেই

চট্টগ্রাম চেম্বার কাদের শাসন করার কথা, কারা শাসন করেছে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসো’র সাথে মতবিনিময়ে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে ব্যবসায়ীদের ৬৪ লাখ টাকা প্রদান

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেছেন, ব্যবসাবাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। চট্টগ্রাম চেম্বারে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার কাদের শাসন করার কথা, বিগত দিনে কারা শাসন করেছে? অথচ এটা ব্যবসায়ীদের সংগঠন। ব্যবসাবাণিজ্যে কোথায় বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা তা ব্যবসায়ীদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা সরকারের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্যবসাবাণিজ্যে আমূল সংস্কার হয়ে যাবে।

গতকাল শনিবার সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের অনুদান গ্রহণ ও মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় হয়। উন্নয়নে অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকামাওয়া মহাসড়ক কি আপনারা দেখেছেন? ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের পরিস্থিতি আমাদের উন্নয়নের কোন গভীর খাদে নিপতিত করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল কার নির্দেশে, কাদের জন্য করা হয়েছে তা যদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখি, তবে অনেক কিছুই জানতে পারব।

এটাই সংস্কারের শেষ সুযোগ উল্লেখ করে ফারুক ই আজম বলেন, আমরা অনেকদিন ক্ষমতায় থাকতে আসিনি। পরিবর্তন করতে এসেছি। আমরা যদি পরিবর্তন করে দিয়ে যেতে না পারি, তবে এই দেশ শেষ হয়ে যাবে। কি চাকরিজীবী, কি পেশাজীবী, আমরা যদি মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই তবে এ অগ্রযাত্রায় প্রত্যেককে সহযোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জের হৃদস্পন্দনে রয়েছে বাণিজ্য। আমি আগেই বলেছি, বাণিজ্য আমাদের ধারণ করে। আমাদের চট্টগ্রামবাসীর মানসে ব্যবসা। আমরা উদ্যোক্তা, অভিযাত্রী। পৃথিবীর বিভিন্ন বন্দরে, প্রান্তরে আমরাই অভিযান শুরু করেছি। এটি আজকের বিষয় নয়, বহুকাল আগের বিষয়। আমরা কীভাবে বিবর্তিত হলাম সেটা আমাদেরকে বিবেচনায় নিতে হবে।

ব্যবসায়ীদের পরামর্শ চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আপনারা চাইবেন না, নির্দেশ দিবেন। কোনটা করলে দেশের কি উপকার হবে, সেই সংস্কারগুলো করার জন্যই এখানে আসছি। পরিবর্তনসংস্কার সব জায়গায় আন্তরিকভাবেই করতে চাই এবং সেটাতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। সমস্যা যেখানে হবে, সেই সমস্যায় যারা নিপতিত আছেন, তাদের কাছ থেকেই সেই সুপারিশটা আসতে হবে। আমাদের কারো সাথে কোনো বিষয় নিয়ে কোনো বিদ্বেষ নেই।

তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জের ঐতিহ্য আমাদের ফেরাতেই হবে। বৃষ্টিবন্যায় খাতুনগঞ্জ অর্ধেক ডুবে যায়। সেখানে বাণিজ্য উপযোগী হয় না। আজকে থেকে একশত বছর আগে যে রকম ছিল, এখনও কেন সে রকম থাকবে? কখনও কি আমরা প্রশ্ন করেছি? খাতুনগঞ্জে পণ্য পরিবাহী গাড়িগুলো কিভাবে যেতে পারে, কিভাবে এ ধরনের সুযোগসুবিধাগুলো দিলে বাস্তবিকভাবে ব্যয় সংকুচিত হতে পারে?

তিনি বলেন, আমরা কেউ বিচ্ছিন্ন নই। সবাইকে সম্মিলিতভাবে এটি গড়ে তুলতে হবে। কারো উপরে দায় চাপিয়ে নয়। কিভাবে পরিবর্তন হবে তা নিয়ে আপনারা ভাবেন। আপনাদের ভাবনার সঙ্গে আমরা যুক্ত হতে চাই।

সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীকের মাধ্যমে ৬৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছগীর আহম্মেদের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মো. তৈয়বুর রহমান। বক্তব্য রাখেন এসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবদুস সালাম, সহসাধারণ সম্পাদক আহমদ রশীদ আমু ও সদস্য আমিনুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের সহসভাপতি মো. জাহেদুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম কামাল উদ্দিন, সহসাধারণ সম্পাদক অনিল চন্দ্র পাল, বন্দর বিষয়ক সম্পাদক এস এম বখতিয়ার, নির্বাহী সদস্য মোসলেম উদ্দিন, মোহাম্মদ হোসেন, আবুল বশর চৌধুরী, সদস্যদের মধ্যে হাজী মোহাম্মদ আবুল বশর, মোহাম্মদ আবু বক্কর, মীর মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল্লাহ, আবসার উদ্দিন, বদিউল আলম এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম আজাদ।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, মাননীয় উপদেষ্টা একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব এবং সাদা মনের মানুষ। তার চেয়ে বড় পরিচয় তিনি আপনাদের এলাকার মানুষ। উনাকে দিয়ে যদি আপনারা আপনাদের সমস্যা সমাধান করতে না পারেন সেটা আপনাদের ব্যর্থতা।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, ক্রীড়া সংগঠক, যুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের যে জাহাজটি গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল তার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ফারুক ই আজম বীর প্রতীক সাহেব। তিনি কখনো নিজেকে প্রকাশ করতেন না। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দূরবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বর্তমানে কান্না করছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের যে কোনো প্রয়োজনে যেতে হয় ঢাকায়। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ফাইল অনুমোদন পাওয়ার পরে কাজ শুরু করতে পারে। অথচ ঢাকায় ফাইল অনুমোদন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি আছে। এই বিভাজন দূর করার জন্য তিনি উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, একমাত্র চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনকালে ওজন স্কেলে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন সম্ভব হয় না। অথচ অন্যান্য অঞ্চলে এ ওজন স্কেল নেই। এটি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। তাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল বশর চৌধুরী তার বক্তব্যে খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের নানা হয়রানি ও বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেলের লাগেজ ভ্যানে সাড়া নেই
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত, রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে