নৌপরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের একটা টিম চীন থেকে জাহাজ ক্রয়ের বিষয় নিয়ে কাজ করছে। জাহাজ ক্রয়ের ব্যাপারে দুর্নীতির যে প্রশ্নগুলো উঠছে, মন্ত্রণালয় এসব ব্যাপারে দুদকের সাহায্য নিবে এবং দুদক তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, আগের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আমরা নেগোসিয়েশনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তারা যে দাম নির্ধারণ করেছে সেটা থেকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। জাহাজ আমাদের প্রয়োজন তাই আমরা যাতে সেগুলো কিনতে পারি সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।
আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) কার্যালয়ে চেয়ারম্যান এবং পরিচালকসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন উপদেষ্ঠা। এরপর ব্রিফিংকালে চীন থেকে জাহাজ ক্রয়ে দূর্নীতির অভিযোগ উঠছে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ সংগ্রহ করা প্রসঙ্গে উপদেষ্ঠা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটি টিম কাজ করছে দাম নির্ধারণের জন্য। আমরা দাম কমানোর চেষ্টা করছি। কে টাকা নিয়ে গেল তা বের করা মুশকিল। কাউকে টাকা দিয়ে থাকলে কীভাবে বের করবো। ডলার ছিল ৯০ টাকা। তদন্ত হবে। প্রকল্প বন্ধ থাকলে জাহাজ তো পাবো না। এ মন্ত্রণালয়ে অনেক প্রকল্প হচ্ছে, এসব কেন হচ্ছে ? প্রকল্প শেষ পর্যায়ে। এখন বন্ধ করে দিলে যে টাকা অপচয় হয়েছে তা আপনার, আমার। গলায় কাঁটা লেগেছে, গিলতে হবে।
তিনি বলেন, আমি তো বলেছি, চুরির মহাসমুদ্র না, প্রশান্ত মহাসাগর। আমাদের কাছে যে ডকুমেন্ট আছে তা দুদকের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। দুদক তদন্ত করবে। একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি হাসতে হাসতে বললেন, উনার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। আপনি কখনো স্বপ্ন দেখেছেন ৪০০ কোটি টাকা। আমি তো দেখিনি।
পরপর অয়েল ট্যাংকারে বিস্ফোরণ ঘটার কারণে জনমনে সন্দেহ জেগেছে এতে কোন নাশকতার লক্ষণ আছে কিনা সংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় তেলবাহী দ্বিতীয় জাহাজে বিস্ফোরণে একজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগের বিস্ফোরণেও প্রাণহানি ঘটেছে যেটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। এরা খুবই দক্ষ কারিগর ছিলেন, তাদের অভাব পূরণ হবার নয়। তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব বিএসসি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিয়েছে। সিকিউরিটি এক্সপার্ট অয়েল ট্যাংকারে যারা কাজ করেছেন এবং বিএসসি’র প্রতিনিধিসহ ১০ জনের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম শেষে বলা যাবে কেন এ ঘটনা ঘটেছে।
উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু দুটি জাহাজ বিষ্ফোরণের কারণে অকেজো হয়ে গেছে, তার বিকল্প হিসেবে অন্যান্য জাহাজের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে, যাতে লাইটারিং জাহাজের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। আমি কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং পোর্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তারা দ্রুততার সাথে আগুন নিভিয়েছে এবং সেখানে আটকে পড়া ৪৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছে। নেভাল চিফ, বন্দর চেয়ারম্যান, কমান্ডার থেকে শুরু করে সবার সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। ভোর সাড়ে চারটা পযর্ন্ত আমি তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং একজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাঙালি উদ্যোক্তা যারা বিদেশে ব্যবসা করেন তারা জাহাজ এবং পাটে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আমি বিদেশিদের আহ্বান জানাই তারা যেন আমাদের জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ায় এবং একসাথে কাজ করে এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।