আওয়ামী লীগের শাসনামলে পুনঃতফসিলের উদার নীতির কারণে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। গতকাল রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। শুধু ২০২৩ সালেই ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা এক বছরে এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। খবর বিডিনিউজের।
গত বছর শেষে ব্যাংক খাতের পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে স্ট্রেসড বা দুর্দশাগ্রস্ত হিসেবে দেখায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। একই সময়ে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো ৭১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। সব মিলিয়ে গত বছরের শেষে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের মোট পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মোট ঋণের ৩২ দশমিক ১০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২৩ শেষে মোট অনাদায়ি ঋণ ছিল ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা।
দায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও : গত বছর পুনঃতফসিল ঋণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার জন্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকেও দায়ী করা হচ্ছে। নির্বাচনে প্রার্থী হতে গত বছরের শেষ দিকে অনেক প্রার্থী তাদের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত হন। বছর শেষে নিজেদের আর্থিক হিসাব ভালো দেখাতেও শেষ প্রান্তিকে অনেক খেলাপি গ্রাহকের ঋণ উদার হস্তে নবায়ন করে ব্যাংকগুলো।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রার্থীদের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে তা মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে নবায়ন বা পরিশোধ করতে হয়। যথাসময়ে ঋণ নবায়ন না হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যায় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সে সময় বাছবিচার ছাড়াই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। আবার ২০২২ সালের জুলাইয়ে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এসে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের পুরো ক্ষমতাই ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেন। সেই সঙ্গে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালাও শিথিল করা হয়।
গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলো ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করে। পরের বছর ২০২০ সালে পুনঃতফসিল কম হয়। ওই বছর খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয় ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ২৬ হাজার ৮১০ কোটি, পরের বছর ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি এবং ২০২৩ সালে ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়।
ঋণের ১১ দশমিক ৩ শতাংশ চলতি মূলধন, ব্যবসায়িক ১১ শতাংশ, আমদানি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্মাণ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ কৃষি খাতে এবং ৫ দশমিক ৫ শতাংশ অন্যান্য খাতে।