ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী থেকে মীরসরাই উপজেলা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারের ও অধিক এলাকাজুড়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার রাত ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার জ্যামে চরম দুর্দশার মুখে দূরদুরান্তের যাত্রীরা। আটকে থাকা যাত্রীদের মধ্যে বয়স্ক, শিশু ও মহিলা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম। কেউ সড়কে বসে পায়চারি বা বিশ্রাম নিচ্ছেন বা ক্লান্তি দূর করছেন।
এতে আবার ফেনী–মীরসরাই এলাকার বন্যা দুর্গতদের জন্য মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় মরার উপর যেন খাড়ার ঘা। তবু ও কিছু স্বেচ্ছাসেবী মহাসড়কে অবস্থান করে একটি রুট পুরোপুরি বন্ধ হলে ও আরেকটি রুটে জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় সহযোগিতা করে।
প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেনে এ সড়কে যাতায়াত করা শিশু, মহিলা যাত্রী থেকে শুরু করে সকলে। চালকরা ও হতাশার মধ্যে পতিত যেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ফেনীর মুহুরীগঞ্জ থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে রাত প্রায় ১২টার পর থেকে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হবার পর ও এখনো সচল হয়নি সড়ক। সরজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের মীরসরাই সদর থেকে ফেনী পর্যন্ত হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস ও খাবার সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাক আটকা রয়েছে। উল্টোপথে ত্রাণবাহী গাড়ি যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। আবার অনেক গাড়ি যানজটে আটকা রয়েছে।
জ্যামে আটকা সোনাপাহাড় এলাকায় গাছতলায় বসেছিল এক বৃদ্ধা রহিমা আক্তার (৬৫) বলেন, চট্টগ্রাম থেকে রাতে বাসে উঠে এখানে এসে থেমেই আছি। এমন যানজটে আর পড়িনি। সীটে বসে থেকে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে। নেই খাবার। তবু ও বাইরের এই গাছতলায় মুক্ত বাতাসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। মহাসড়কের মস্তান নগর এলাকায় বাস থেকে নেমে রাস্তায় বসে থাকা সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটির ছাত্রী অর্পিতা বলেন কঙবাজার থেকে ভাই বোনসহ সন্ধ্যায় রওনা হয়েছি সকালে ঢাকা পৌঁছাবো বলে আর এখন এখানেই দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, এমন দুর্ভোগে আর পড়তে হয়নি।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথের আরেক যাত্রী হাফেজ মাওলানা সাদ হোসাইন বলেন, যাচ্ছিলাম ঢাকা, ১৬ ঘন্টা রাস্তায় কাটিয়ে পরিবার নিয়ে এখন ফিরতি চট্টগ্রাম চলে যাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ট্রাক বা টেম্পো, টেঙি যাই পাই ফেরত চলে যাব। কারণ ঢাকার পথ কখন সচল হবে তা এখনো কেউ বলতে পারছে না।
ট্রাক চালক মোরশেদ উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শহর থেকে মাল বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা আটকা রয়েছি, এতক্ষণে ঢাকা পৌঁছানোর কথা, কিন্তু এখনো ধুমঘাট আটকা রয়েছি। যাত্রীবাহী গাড়ির চালক রবিউল আলম বলেন, ঘণটার পর ঘণ্টা যাত্রী নিয়ে বসে আছি। যাত্রীরা অনেক কষ্টে আছেন। চট্টগ্রামেও ফিরে যেতে পারছি না।
এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, সোনাপাহাড় এলাকাসহ আমার এলাকার কয়েকটি অংশে বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো বার বার গর্ত হয়ে যাচ্ছিল, ডুবে যাচ্ছিল, তবুও আমি একটু সুবিধা পেলেই সংস্কার করে সচল রাখছি। আশা করছি ফেনীর এই বিপর্যস্ত অংশ ও পানি সরে গেলেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমরা ও শুধুমাত্র প্রকৃতির অনুকূলতা পাবার অপেক্ষায় আছি।