টানা প্রায় পাঁচদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে খাগড়াছড়ি–সাজেক সড়ক ডুবে গিয়ে রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে সারাদেশের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সাজেকে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন প্রায় আড়াই শতাধিক পর্যটক।
বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীণ আক্তার জানান, সাজেক সড়কের দীঘিনালার কবাখালি অংশের সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সোমবার ও মঙ্গলবার সাজেকে যারা বেড়াতে এসেছেন তারা মূলত আটকা পড়েছেন। আনুমানিক পর্যটকের সংখ্যা প্রায় আড়াই শতাধিক হবে। ভারী বৃষ্টিপাতে কাচালং নদীর পানি বাড়ায় বাঘাইছড়িতেও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তবে উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি–চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক ও রাঙামাটি–বান্দরবান আঞ্চলিক সড়কের ৭টি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, টানা বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রাঙামাটি–বান্দরবান আঞ্চলিক সড়কের ছোট বড় ৭টি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও সঙ্গে কথা বলে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলার সব আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে টানা ৫ দিনের ভারী বর্ষণে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পুরো জেলায় অন্তত ৫০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেক চেঙ্গী নদীর পানি বেড়ে খাগড়াছড়ি সদরের মুসলিমপাড়া, মেহেদীবাগ, কালাডেবা, গঞ্জপাড়া, ঠাকুরছড়াসহ চেঙ্গী ও মাইনি নদীর পাড়ের নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। গত দুই মাসের ব্যবধানে তিনবার পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শহরতলী ও পৌর এলাকার নদী ও ছড়ার পাড়ে বসবাসকারী লোকজন। গ্রামগুলো পানিতে ডুবে গেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।
একই অবস্থা খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং, কবাখালি ও বোয়ালখালি ইউনিয়নে। খাগড়াছড়ি–সাজেক সড়কের কবাখালি এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকের সাথে সারাদেশের যান চলাচল বন্ধ আছে। বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেরুং ইউনিয়ন। মেরুং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, ইতোমধ্যে পানি উঠতে শুরু করেছে। প্রায় ২০টির মতো গ্রাম প্লাবিত। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আসবেন তাদের জন্য ত্রাণ সহয়তা হিসেবে খাবার ব্যবস্থা করা হবে। সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় লংগদুর সাথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দীঘিনালা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পানি নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। আমরা ২১টা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। বন্যা দুর্গতরা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠার পর তাদেরকে রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে দুর্যোগ মোকাবেলায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো.সহিদুজ্জামান বলেন, পাহাড় ধস মোকাবেলায় ইতোমধ্যে মাইকিং করে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। পুরো জেলায় ৯৯টা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় ৪শ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে।