গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সড়ক ও বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় এর সুফল মিলতে শুরু করেছিল। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। চালের দামও আশানুরূপ কমেনি। এ নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন ক্রেতারা। বলার অপেক্ষা রাখে না, নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে চাপে থাকে নিম্নআয়ের মানুষ। তিনবেলার খাবার জোটানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রথম ও প্রধান কাজ হবে দেশে সার্বিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। এতে সবার মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে। বহুদিন ধরেই সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতি– এই দুটি ক্ষেত্রে সংকট চলছে; যা এখন আরও তীব্র হয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে সাধারণ নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ব্যাপক তফাত থাকায় নাগরিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল দেশব্যাপী। নিয়মিত চড়া মূল্যে নিত্যপণ্য ক্রয়ের মধ্যেই প্রায় সময় পেঁয়াজের মূল্য ১৫০, ভোগ্য তেলের মূল্য প্রতি লিটার ১৮০ থেকে ২০০, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০, ব্রয়লার ডিম ১৬০ টাকা ডজন পর্যন্ত বিক্রির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পণ্যমূল্য কমানোর জন্য আহ্বান জানানো হলেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। নিত্যপণ্যের চড়া মূল্যের জন্য সিন্ডিকেটকে দোষারোপ করা গেলেও সেই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি কখনোই। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। ইতোমধ্যে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সতর্ক দৃষ্টির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পর্কিত। দেশে কোনো পণ্যের উৎপাদন কম হলে যতটা সম্ভব আমদানি করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন চাপে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে কী কী করা দরকার, সরকার সে বিষয়ে সজাগ আছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের দেশীয় প্রধান এডিমন গিনটিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সরকারি কর্মচারীরা রেশন চাইলে কী করা হবে এবং এ ক্ষেত্রে বেসরকারি চাকরিজীবীদের কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তাঁর কাছে সবাই সমান। সবাই যেন শোভনভাবে জীবন যাপন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রে তা আমদানিবাহিত। এ বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির বড় স্তম্ভ হচ্ছে বাণিজ্য–দেশীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্য–দুটি মিলেই। যতটা সম্ভব, দেশে ব্যবসা–বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হবে। দুর্নীতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বাণিজ্যের বড় ভূমিকা আছে। ফলে এসব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা করা হবে।
মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক করে বিদ্যমান সমস্যা দূর করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা। বাণিজ্য সংগঠনগুলোর বড় ভূমিকা আছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি আশ্বস্ত করেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কী হয়, সে বিষয়ে আমার ধারণা আছে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকেন, এ বিষয়ে যা করা দরকার, আমরা তা করব।’
তবু জনসাধারণ চায়, নিত্যপণ্যের বাজার তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকুক। তারা মনে করে পণ্যমূল্য কমাতে চাঁদাবাজি বা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণই নয়, সেই সঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। কোন পণ্য কখন আমদানি করতে হবে এসব বিষয়ও আগেই ভাবতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘সরবরাহ শৃঙ্খলে যেসব মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেট রয়েছে, তাদের সেই চক্রও ভেঙে দেওয়া জরুরি। মোট কথা দেশের মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে হলে মূল্যস্ফীতি কমাতেই হবে। আর পণ্যের দাম কমাতে হলে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে।’