রাস্তা-ফুটপাত পরিষ্কার ও যান নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা

তাদের এ কার্যক্রমে সাধারণ লোকজনের সন্তোষ প্রকাশ

মোরশেদ তালুকদার | বুধবার , ৭ আগস্ট, ২০২৪ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

কেউ রাস্তাফুটপাতের ময়লা পরিষ্কার করছেন। কেউ সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে এরা কেউ পরিচ্ছন্ন কর্মী বা ট্রাফিক পুলিশ নন। এরপরও শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে এবং সড়কের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে কাজ করছেন তারা।

গতকাল দুপুরে নগরের নিউমার্কেট মোড়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। আলাপকালে তারা জানায়, এরা সবাই ছাত্র। ছাত্রজনতার আন্দোলনের পর গত সোমবার দেশ ছেড়ে পালান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ভেঙে পড়ে চট্টগ্রাম শহরের দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা। রাস্তায় দেখা যায়নি কোনো ট্রাফিক পুলিশ। এ অবস্থায় সড়কের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে গতকাল সকাল থেকে মাঠে নামে ছাত্ররা। স্বেচ্ছায় তারা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নকর্মীরও দায়িত্ব পালন করেন। তাদের এ কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সাধারণ লোকজন। একইসঙ্গে তাদের প্রশংসা করেন সবাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের প্রশংসা ভাসান অনেকে। কয়েক জায়গায় স্থানীয় লোকজন ও পথচারী তাদের খাবার ও পানি দিয়ে প্রকাশ করেন ভালোবাসা। গতকাল শহরের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনে দেখা গেছে, বহাদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২নং গেট, জিইসি মোড়, টাইগারপাস, প্রবর্তক মোড়, নিউমার্কেট মোড়, চকবাজার, বড়পোলসহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছাত্ররা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা যেখানেসেখানে যাত্রীবাহী গাড়ি দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। কারো রাস্তা পার হতে সমস্যা হলে গাড়ি থামিয়ে পারও করে দেন। মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট না থাকলে পরবর্তীতে হেলমেট পরার পরামর্শ দেন। এছাড়া অনেক জায়গায় ঝাঁড়ু দিয়ে রাস্তাও পরিষ্কার করছিল তারা। সাফ করেন ময়লাআবর্জনা। এ বিষয়ে ছাত্ররা জানান, ‘লাখো ছাত্রজনতার অর্জিত দেশরাখবো মোরা ক্লিন বাংলাদেশ’ স্লোগানে তারা গতকাল থেকে সড়ক পরিষ্কার ও ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম শুরু করেন।

বহাদ্দারহাটে মিড আইল্যান্ড পরিষ্কার কার্যক্রমে যোগ দেন সাধারণ লোকজনও। বহাদ্দারহাট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ভাঙচুর করা হয় ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ’ শীর্ষক স্মৃতি স্মারকের। এরপর থেকে সেখানে ছড়িয়েছিটিয়ে পড়েছিল ভাঙা কাঁচের টুকরো। সাথে ছিল ছোটোবড় অসংখ্য ইটের টুকরো। গতকাল তা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে ছাত্রদের। এতে অংশ নেয়া সাধারণ একজন আজাদীকে বলেন, শহরটা আমাদের। এ শহরকে তাই আমরা সুন্দর করে সাজাব। যাদের উপর শহর সুন্দর রাখার দায়িত্ব ছিল তারা পালিয়ে গেছে। তাই আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই।

২ নম্বর গেইটে সালাম নামে এক ছাত্র বলেন, শহরে এ মুহূর্তে ট্রাফিক পুলিশ নেই। সড়কে বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। তাই আমরা দায়িত্ব পালন করছি। এক ছাত্র বলেন, স্বেচ্ছায় পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। নগরবাসীকে একটা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দিতে চাই। সুমাইয়া রহমান নামে এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু এখন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নেই তাই আমরা নিজ উদ্যোগে দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রামের সড়ক এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নেমে এসেছি।

গতকাল সন্ধ্যায় চকবাজার গোলজার মোড়ে দেখা গেছে, গাড়ি থামিয়ে পথচারী পারাপারে সহযোগিতা করছেন ছাত্ররা। এসময় পারভেজ নামে এক পথচারী আজাদীকে বলেন, ছাত্ররা তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। এতে তারা তাদের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে। এখন তারা রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা সবকিছু সুন্দরভাবেই ম্যানেজ করছেন।

হানিফ মান্নান নামে একজন ফেসবুকে লিখেনচকবাজারে ঘুরতে বের হলাম। দেখেছি পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা ট্রাফিকের ভূমিকা পালন করছে, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। আসলে এদের হাতে দেশ নিরাপদ। আর নিরাপদ হবেইনা বা কেন, এরা তো সে তরুণ অরুণ সৎ মানবিক দেশপ্রেমী বিপ্লবী শিক্ষার্থী যারা গণভবন থেকে লুণ্ঠিত ৬০ লাখ টাকা সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করেছে। কতটা নির্লোভ হলে এমন মহৎ কর্ম সম্পাদন করতে পারে ভাবুন। তারা যে উচ্ছন্নে গেছে বলে এক শ্রেণীর হতাশাবাদীদল একপ্রকার তাচ্ছিল্য ও অনিহাভাব প্রদর্শন করত, কিংবা টিকটক প্রজন্ম বলে সুখ অনুভব কর, তাদের বলব মহাশয়! তারা টিকটক প্রজন্ম নয়, বলুন ঠিকঠাকপ্রজন্ম। তাদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন। তারাই ছিনিয়ে এনেছে নবপ্রভাতের রৌশনি, এক অভূতপূর্ব স্বর্ণালী বিজয় সকাল। আর তারাই এইদেশটাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের নয়াদিগন্তে ইনশা আল্লাহ্‌।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া
পরবর্তী নিবন্ধড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত