বাঁশখালীর মিষ্টি ও সুস্বাদু পানের সুখ্যাতি রয়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও। বাঁশখালীতে বাংলা পান, মিষ্টি পান চাষ করা হয়। পান একটি উচ্চমূল্যের ফসল এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হয়ে থাকে। এবার ১৪০ হেক্টর জমিতে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকাজুড়ে বর্তমানে সারি সারি পানের বাগান যে কারো মন কাড়ে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দৃষ্টিনন্দন পানের বরজ দেখতে চলে আসেন অনেকেই। বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা পান চাষের জন্য উর্বর। এখানে পান চাষে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার কৃষক। অনেকে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরায় পান চাষ করে। অনেকেই ঐতিহ্য গতভাবে ধরে রেখেছে এ পান চাষ কে। দিনদিন পান চাষে ঝুঁকেছেন চাষীরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় এ বছর বাঁশখালীতে ১৪০ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। বর্তমানে চলছে পান চাষের ভরা মৌসুম। তাই বাজারে প্রচুর পরিমাণে পানের সহজলভ্যতা থাকায় গত কয়েক মাস আগে দাম একটু কম হলেও চলতি মাসে পানের দাম চড়া। ফলন বেশি হওয়ায় চাষীরা রয়েছে ফুরফুরে আমেজে। উপজেলার সর্ব দক্ষিণের ইউনিয়ন পুঁইছড়ি এলাকার নাপোড়া এলাকায় পান চাষের সবচেয়ে উপযোগী স্থান। এখানকার পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমাণ পান চাষ হয়ে থাকে। তাছাড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে পূর্ব চাম্বল, জলদী, বৈলছড়ি, সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রাম,কালীপুর ও পুকুরিয়া এলাকায় পান চাষ বেশি হয়ে থাকে। উপজেলার পশ্চিমে সাগর, পূর্বে পাহাড় আর মাঝখানে সমতলভূমি। এখানে বছরের বারো মাস নানা ধরনের সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায় মিষ্টি ও সুস্বাদু পানের চাষ হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি শহরে পান বাজারজাত করছেন। এখানের স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারি ব্যাবসায়ীরা পান সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করেন। বাঁশখালীতে সাধারণত সপ্তাহে দুদিন পানের বাজার হলেও একই দিনে সব স্থানে হয়না। স্থানভেদে দিনের ভিন্নতা থাকলেও সপ্তাহে দুইদিনেই বাজার হয়। বাঁশখালীর বিশাল পান বাজারটি পুঁইছড়ির মিয়া মার্কেটে। প্রতি শুক্রবার ও রোববার এখানে পানের জনজমাট বাজার বসে। সরেজমিনে বাজার পরিদর্শনে দেখা যায় সন্ধ্যা নামলেই পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নামতে শুরু করে পান চাষীরা। রাত যত বাড়ে বেচা–কেনার ধুমও ততো বাড়তে থাকে। পুঁইছড়ি পানচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, বাঁশখালীর প্রায় পূর্বাঞ্চলে পানচাষ হয়। সবচেয়ে বেশী পানচাষ হয় আমাদের এলাকায়। এখানে প্রায় আটশতাধিক চাষি পানচাষে সম্পৃক্ত। এবারে পানের ভাল ফলন হয়েছে। ভাল দামও পাচ্ছে কৃষকরা। এককানি জমিতে নতুন বরজ করা থেকে শুরু করে পান বিক্রির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক কানি জমির বরজ থেকে ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা লাভ হয়। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন সাইজে পানের জোড়া (দুই বিরা) ৫শ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তিনি আরো বলেন, পান চাষের প্রধান ঝুঁকি অতি বৃষ্টি। সেপ্টেম্বরে শেষ বর্ষা অর্থাৎ পানচাষ মৌসুমের শুরুতে দেখা যায় বহু বরজ নষ্ট হয়ে যায়। বৃষ্টির মাত্রা অধিক হলে চাষিরা নিশ্চিত লোকসানে পড়ে। বাঁশখালীতে পান চাষীদের প্রশিক্ষণ, সহজ কিস্তিতে ঋণপ্রদান করলে পানচাষ হবে আরো সমৃদ্ধ। সাধনপুর এলাকার পানচাষী তপন দত্ত জানান, এ এলাকায় প্রায় সময় হাতি এসে পানের বরজ তছনছ করে ক্ষতিসাধন করলে ও সরকারি তেমন কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়না। উপজেলা কৃষি অফিসার আবু সালেক জানান, পান চাষের উপর একটা কর্মসূচি ছিল সেটার আওতায় কৃষি অফিস থেকে শুধু পান চাষের উপরে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত। সেটা এখন নেই। তারপরও এখন অন্যান্য প্রশিক্ষণে আমরা একটা সেশন রাখি যেখান থেকে উচ্চমূল্য ফসল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, তার মধ্যে পান অন্যতম হিসেবে বাঁশখালীতে বিবেচনা করা হয় এবং প্রশিক্ষণে আলোচনা করা হয়। তিনি আরো বলেন, পান চাষের উপর নির্দিষ্ট প্রকল্প থাকা উচিত। তাহলে স্পেসিফিক প্রশিক্ষণ দিলে কৃষক আরো উপকৃত হত। পান চাষীদের নির্দিষ্ট কোন বাজারের জায়গাও নেই। চাম্বলে পান চাষী সমিতি আছে সেখানেও প্রায় ৯০০ এর অধিক সদস্য আছে।
সর্বশেষে আঞ্চলিক গানের বিখ্যাত শিল্পী শেফালী ঘোষ আর শ্যাম সুন্দর বৈঞ্চবের পান নিয়ে গাওয়া গানের সে কলি– ‘মহেষখালী/বাঁশখালীর পানের খিলি তারে বানাইয় খাওয়্যাইতাম’ মনে করিয়ে দেয় ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে এখানকার পানের কদর ও চাহিদার কথা।