ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ফিরল ৫ দিন পর

| বুধবার , ২৪ জুলাই, ২০২৪ at ২:১০ অপরাহ্ণ

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফিরেছে পাঁচ দিন পর। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ইন্টারনেট ফিরতে শুরু করে। অগ্রাধিকার বিবেচনায় ব্যাংক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রপ্তানিমুখীখাতসহ অন্যান্য কয়েকটি খাতে আগে ইন্টারনেট দেওয়া হবে বলে বিকালে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে মোবাইল ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও ফেসবুক সেবা বন্ধ রয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাতসহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে বৃহস্পতিবার রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেদিন মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের ওপর থাকা ইন্টারনেট সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকটি ডেটা সেন্টারও। সে কারণেই সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায় বলে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য।

মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোবাইলে আর্থিক লেনদেন, বিদ্যুৎগ্যাসের প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। কোথাও কোথাও ব্যাংকের এটিএম বুথও বন্ধ হয়ে যায়। ইন্টারনেট না থাকায় স্থবির হয়ে পড়ে ইকমার্স, পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসাবাণিজ্য, বন্ধ থাকে বন্দরের কার্যক্রম। ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের সংবাদ সেবাও অচল হয়ে পড়ে।

সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হতে থাকে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে তারা ব্যবসাবাণিজ্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ইন্টারনেটা সেবা চালুর ব্যবস্থা করার আহ্‌বান জানান।

মোবাইল ডেটা বন্ধ করার কথা জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এটা পূর্বের কোনো ঘোষণা ছিল না; পরিবেশপরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতার স্বার্থে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি। আমরা লক্ষ্য করছি, কোথা থেকে কারা এই অর্থায়ন করছে, কোথা থেকে কারা এই কনটেন্ট তৈরি করছে। তার জন্য আমরা ফিজিক্যাল এবং ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স ব্যবস্থা জোরদার করছি। আমরা আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারব। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার রাত থেকেই মোবাইলে ফেইসবুক, মেসেঞ্জার চালাতে পারছিলেন না গ্রাহকরা।

মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করার কারণ জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, সোশাল মিডিয়াকে গুজব, মিথ্যা, অপপ্রচার চালানোর অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে একটি গোষ্ঠী। শুধু দেশের ভেতর থেকে না, দেশের বাইরে থেকে কিছু কনন্টেন্ট বুস্ট করা হচ্ছে। তার মানে টাকা দিয়ে মিথ্যা খবরটাকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার যে অপকৌশল বা ষড়যন্ত্রএটা যখন আমরা দেখছি তথ্যউপাত্ত এবং গোয়েন্দা সংস্থার সকল বিশ্লেষণে; তখন আমরা মনে করছি, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের যার যতোটুকু সক্ষমতা আছে, সেটা করা দরকার। একদিকে পুলিশ, আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী তারা চেষ্টা করছেতাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা, আমরা সাইবার নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। যে জায়গায় যে ধরনের ভূমিকা নেওয়া উচিৎ বা প্রয়োজন, সেটাই আমরা চেষ্টা করছি।

গুজব ঠেকাতে ফেসবুক, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে তেমন সহযোগিতা মিলছে না জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যদি সহযোগিতা করত, তাহলে আমাদের কিন্তু এতো কঠোর অবস্থানে যেতে হতো না। আমরা বারবার সহযোগিতা চাচ্ছি, এখন আজকে তারা যোগাযোগ করছে। তারপরও আমরা খুব বেশি আশস্ত বা আশাবাদী হতে পারছি না। কারণ তারা যেসকল দুর্বল যুক্তি দেখাচ্ছে, সেগুলো কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য না।

পলক বলেন, তাদের যে প্রাইভেসি পলিসি আছে, তা আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। তারা দেশভিত্তিক, ঘটনাভিত্তক তাদের প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাদের পলিসি বাংলাদেশের বেলায় একরকম, মিয়ানমারের বেলায় একরকম, ইসরায়েলফিলিস্তিন ব্যাপারে একরকম, ইউক্রেইনরাশিয়ার ব্যাপারে একরম, ইউরোপআমেরিকা অস্ট্রেলিযার জন্য আরেকরকম, সিঙ্গাপুরের জন্য আরেককম। এটা তো হতে পারে না। তারা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, তাদের একটা নীতি থাকবেযে দেশের আইন যা বলবে, সেটা তাদের করতে হবে; তাই না? তারা তো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। তাদের আইন তো সবাইকে বাধ্য করতে পারে না। বরঞ্চ যে দেশের আইন, সেটা তাদের মানতে হবে।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল, টিকটকসবাইকে আমরা বলে দিচ্ছি, আমাদের দেশের প্রত্যেকটি প্রাণের মূল্য আছে। এ ধরনের ক্ষতি যদি আগামীতে এদের কারণে হতে থাকে, আমরা এটা কখনোই ছাড় দেব না। আমরা চাই তারা যেন বাংলাদেশে অফিস, ডেটা সেন্টার চালু করে। আমাদের আইন মেনে চলে।

পাঁচ দিন পর অচলাবস্থার অবসানের আগাম খবর দিয়ে মঙ্গলবার বিকালে এক ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষমূলক ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি ফিরে আনছি। কেউ যেন মিথ্যা গুজবে বিভ্রান্ত না হন। মূল ধারার গণমাধ্যম যেভাবে লড়াই করছে। তাদের সংবাদগুলোকে যেন জনগণ প্রাধান্য দেয়, গ্রহণ করে। বাকি যেসব সামাজিক গণমাধ্যম যেখানে গুজব তৈরি করা হয়, গুজব ছড়িয়ে মানুষের প্রাণহানি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। দেশের সাথে সাথে বিদেশি মিডিয়াগুলো যুক্ত হয়েছে। পেইড এজেন্ট হিসাবে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব ব্যাপারে আপনারা সজাগ থাকবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য নিউ মিডিয়াতে মিথ্যা সংবাদ দেখে আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না, আবেগতাড়িত হবেন না। আপনারা সকলেই মূল ধারার গণমাধ্যম অনুসরণ করবেন।

সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের জনগণের কোনো ক্ষতি যেন না হয়, সেজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলো নিয়েছেন। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করেছে। এখন আমরা চাই অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড যেন দ্রুত ফিরে আসে। দেশের পাঁচ কোটি ছাত্রছাত্রী ভাইবোনদের অনুরোধ করব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে ছিলেন। সরকারই কিন্তু বাদী হয়ে আপিল করেছিল। সেই আলোকে সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে। যেই দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল এবং যে আন্দোলনকে পুঁজি করে জিম্মি করে বিএনপিজামায়াত, ছাত্রদলশিবির সন্ত্রাস করে, অগ্নিসংযোগ করে, ডেটা সেন্টার, সাইবার অপটিক পুড়িয়ে দিয়ে, টোলপ্লাজা পুড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশেকে অস্থিতিশীল করেতে চেয়েছিল সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালুর ক্ষেত্রে কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে পলক বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর, বাণিজ্যিক অঞ্চল, গণমাধ্যম, কূটনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, আইটি ফ্রিল্যান্সার, আউটসোর্সিং বিজনেস, সফটওয়্যার ডেভেলপার, রপ্তানিকারক তাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব ইন্টারনেট চালু হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগর ও জেলায় ২৬ মামলা, গ্রেপ্তার ৬২৭
পরবর্তী নিবন্ধসব সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলছে আজ, সূচিতে পরিবর্তন