সাতকানিয়ায় পাহাড়ি এলাকায় রাত নামলেই শুরু হয় বন্যহাতির তাণ্ডব। বাগানের কাঁঠাল ও ক্ষেতের সবজির পর এখন খেয়ে যাচ্ছে গোলার ধান। শুধু তাই নয়, বস্তাভর্তি ধান সাথে করে নিয়েও যাচ্ছে হাতির দল। ভেঙ্গে তছনছ করে দিচ্ছে বসত ঘর। বিশেষ করে উপজেলার মাদার্শা ও এওচিয়ায় প্রায় প্রতিদিনই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বেপরোয়া বন্যহাতির দল। ক্ষিপ্ত হাতির এমন তাণ্ডবে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। রাত হলেই শুরু হয় হাতি আতংক। হাতির ভয়ে এলাকার অনেক মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাতির জায়গায় মানুষের রাজত্ব চলছে। ফলে হাতি এখন মানুষের জায়গায় চলে আসছে। মূলত খাবার ও নিরাপদ আবাসযোগ্য স্থান সংকটের কারণে হাতি বন ছেড়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, এক সময় শুধুমাত্র ধান পাকার মৌসুমে লোকালয়ে আসতো বন্যহাতির দল। ধান খেয়ে আবার ফিরে যেতো। কিন্তু এখন প্রায় সারা বছরই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতি। রাতে লোকালয়ে চলে আসে এবং দিনের বেলায় পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে পড়ে। কোনো কোন সময় দিনের বেলায়ও হাতির দল লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালিয়ে যায়। গত এক মাস যাবৎ প্রায় প্রতি রাতেই হাতির দল এসে বাগানের কাঁঠাল ও ক্ষেতের সব সবজি খেয়ে তছনছ করে দিচ্ছে। বাগানের কাঁঠাল শেষ হওয়ার পর হাতির নজর এখন কৃষকের ধানের গোলায়। লোকালয়ে এসে টিনের গোলা ভেঙ্গে ইচ্ছামতো ধান খেয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি ঘর থেকে ধানের বস্তা সাথে করে নিয়ে গেছে বন্যহাতির দল। গত বৃহস্পতিবার রাতে সাতকানিয়ার মাদার্শা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের শাহনগর পশ্চিম সিকদার বাড়ির মো. মাহমুদুর রহমান চৌধুরীর বাড়িতে ৬–৭টি হাতির দল হানা দেয়। এসময় বন্যহাতির দল গোলা ভেঙ্গে ধান খেয়ে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মো. মাহমুদুর রহমান চৌধুরী জানান, ঘটনার দিন সাড়ে ১১ টার দিকে বন্যহাতির দল বাড়ির কাছে আসে। পরে হাতিগুলো ধানের গোলা ভাঙ্গে। এরপর ইচ্ছেমতো ধান খেয়ে চলে যায়। তিনি আরো জানান, বন্যহাতির দল আমার প্রায় আড়াই শত আড়ি ধান খেয়ে তছনছ করে ফেলেছে।
অন্যদিকে, আগের দিন রাতে এওচিয়ার ৩নং ওয়ার্ডের পাহাড়তলী আলীনগরের তলী পাহাড়ে রফিকুল ইসলাম প্রকাশ বদিউল আলমের বাড়িতেও হানা দেয় বন্যহাতির দল।
এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছালেহ জানান, গত এক মাস ধরে প্রতিরাতেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্যহাতির দল। এতদিন বাগানের কাঁঠাল ও খেতের সবজি খেয়েছে। এখন গোলার ধান খাওয়া শুরু করেছে। খেয়ে যাওয়ার সময় আবার ধানের বস্তা নিয়েও যাচ্ছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন মাদার্শা রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুন মিয়া জানান, প্রতি রাতেই লোকালয়ে হাতি আসার বিষয়টি সত্য। বাগানের কাঁঠাল, খেতের সবজি, গোলার ধান খেয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নিয়ম অনুযায়ী বন বিভাগের কাছে আবেদন করলে তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন। ইতিপূর্বে যারা বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, হাতির জায়গা এখন মানুষ দখল করে নিয়েছে। বনে হাতির খাবার নাই। মূলত ক্ষুধার কারণে লোকালয়ে ছুটে আসছে বন্যহাতির দল। বনে খাবার না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাতি। পাহাড়ে প্রয়োজনীয় খাবার না পেলে সারা বছরই লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালাবে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস জানান, বন্যহাতির দল লোকালয়ে এসে মাদার্শার কৃষকের গোলা ভেঙ্গে ধান খেয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। আবার এওচিয়ার এক কৃষকের ঘর থেকে বস্তাভর্তি ধান নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও জেনেছি। প্রতি রাতেই হাতির দল লোকালয়ে হানা দেয়ায় মানুষ আতংকের মধ্যে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি মাদার্শা রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন নিয়ম অনুযায়ী বন বিভাগে আবেদন করলে ক্ষতিপূরণ পাবে।