ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার আগেই গ্যাস সেক্টরে বেহাল অবস্থা শুরু হয়েছে। আমদানিকৃত এলএনজিনির্ভর চট্টগ্রামের অবস্থা আরো নাজুক। সাগর উত্তাল হয়ে ওঠার কারণে এলএনজি খালাস ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহে ধস নেমেছে। মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালের দুটি জাহাজ থেকে গড়ে ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছিল গত বেশ কিছুদিন ধরে। সেখানে গতকাল তা ২২০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।
এদিকে স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয় ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গতকাল দেওয়া হয় প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়া ছাড়া গ্যাসনির্ভর সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সার কারখানায় সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের প্রবাহে সমস্যা হচ্ছে। সাগর শান্ত না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব–মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম–মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। ঘূর্ণিঝড়টির নাম রেমাল। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত না হানলেও সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। সাগরে বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে মহেশখালীতে এফএসআরইউ (ফ্লোটিং সিস্টেম গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) থেকে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিতে হয়েছে। সাগরে ঢেউয়ের তোড়ে জাহাজ অস্থির থাকে। এতে স্বাভাবিক প্রবাহে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হয় না। প্রতি জাহাজ থেকে প্রতিদিন ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট করে দুটি জাহাজ থেকে ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছিল। তা কমিয়ে প্রতিটিতে ১১০ মিলিয়ন ঘনফুট করে দুটি জাহাজ থেকে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। মহেশখালীতে খালাস হওয়া ১১শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে চট্টগ্রামের জন্য ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো রেখে বাকি গ্যাস ঢাকায় ন্যাশনাল গ্রিডে সরবরাহ দেওয়া হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামে সরবরাহ কমে গেছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কাফকো সার কারখানা এবং রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগে থেকে বন্ধ রয়েছে সিইউএফএল। ফলে চট্টগ্রামের চারটি সার কারখানা, একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন, ছয় লাখের বেশি আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প গ্রাহকের গ্যাসের যোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়েছে। গতকাল শুধুমাত্র শিকলবাহা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়েছে।
কেজিডিসিএলের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে জানান, গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় প্রেসার অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। এতে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতেও গ্যাসের ফ্লো কমে যেতে পারে। সাগর শান্ত হয়ে এলে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।