বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫–১৮৯৪)। বাংলা ভাষার কবি। বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতি–কবি হিসেবে তিনি সুপরিচিত। রবীন্দ্রনাথ তাকে বাংলা গীতি কাব্য–ধারার ‘ভোরের পাখি‘ বলে আখ্যায়িত করেন। বিহারীলাল চক্রবর্তী ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মে কলকাতার জোড়াবাগান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দীননাথ চক্রবর্তী। বিহারীলাল চক্রবর্তী শৈশবে নিজ গৃহে সংস্কৃত ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। অতি অল্পকালের ভিতরে তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারা চালু করেন। তিনি ছিলেন আধুনিক গীতিকবিতার স্রষ্টা। মনোবীণার নিভূত ঝংকারে তাঁর কাব্যের সৃষ্টি। বাঙালি কবি মানসের বহির্মুখী দৃষ্টিকে অন্তর্মুখী করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা কবিতায় তিনিই প্রথম কবির অন্তর্জগতের সুর ধ্বনিত করে তোলেন। অতি অল্পকালের ভিতরে তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারার চালু করেন। এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্যের মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। বিহারীলাল তার কবিতায় ভাবের আধিক্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রকৃতি ও প্রেম, সংগীতের উপস্থিতি, সহজ–সরল ভাষা বিহারীলালের কবিতাকে দিয়েছে আলাদাধারার বৈশিষ্ট্য। বিহারীলাল এর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ হল ‘স্বপ্নদর্শন’(১৮৫৮)। তার রচনাবলীর মধ্যে ‘স্বপ্নদর্শ’ (১৮৫৮), ‘সঙ্গীত শতক (১৮৬২), ‘বঙ্গসুন্দরী’ (১৮৭০), ‘নিসর্গসন্দর্শন’ (১৮৭০), ‘বন্ধুবিয়োগ’ (১৮৭০), ‘প্রেম প্রবাহিনী’ (১৮৭০), ‘সারদামঙ্গল’ ‘(১৮৭৯), ‘দেবরানী’ (১৮৮২), ‘বাউলবিংশতি’ (১৮৮৭), সাধের আসন’ (১৮৮৯), ‘ধূূমকেতু’ (১৮৯৯) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘পূর্ণিমা’ (১২৬৫ বঙ্গাব্দ), ‘সাহিত্য সংক্রান্তি’ (১৮০৬), ‘অবোধবন্ধু’ (১৮৬৩) ইত্যাদি তার সম্পাদিত পত্রিকা। সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও তিনি যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। ‘পূর্ণিমা’ (১২৬৫ বঙ্গাব্দ) নামে একটি পক্ষিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও অবোধ বধূ ও সাহিত্য সংক্রান্তি তার সম্পাদিত পত্রিকা। ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।