ছাত্রীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়া ঠেকাতে ছাত্রদের জন্য উপবৃত্তিকে একটি উপায় হিসাবে কাজে লাগানোর ভাবনার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গতকাল রোববার এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ছাত্রীদের জন্য আমরা অনেক বিশেষ ব্যবস্থা, দীর্ঘদিন ধরে উপবৃত্তি, সেগুলো ছিল; সেগুলো এখন ছাত্র এবং ছাত্রী সকলের জন্য সমানভাবে দেওয়া হচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রে যদি সেটা যথাযথভাবে কাজ না করে, আমরা সেগুলো পরিবর্তন করে ছাত্ররাও যাতে সমানভাবে ছাত্রীদের সাথে এগিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন।
এদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শনিবার ক্লাস চালু রাখা থেকে সরে আসতে ঈদুল আজহা পর্যন্ত অপেক্ষার ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। গতকাল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি যে, আগামী ঈদুল আজহার পরে এটা হয়ত বা আমাদের কন্টিনিউ করতে হবে না। খবর বিডিনিউজের। এছাড়া সরকারি চাকরিতে আবেদনে বয়সসীমা ৩৫ করা নিয়ে সুপারিশের কোনো কার্যকারিতা আর নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, কিছু চাকরিপ্রার্থী এই বিষয়টি নিয়ে অনুরোধ করেছিলেন। আমি কিছু কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনাকালীন মনে হয়েছিল, এই বিষয়ে সুপারিশ করা যেতে পারে। সেই হিসেবে আমি একটি সুপারিশপত্র দিয়েছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, সেই সুপারিশপত্রটিকে পুঁজি করে অনেকে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছেন।
এ বছর পাসের হার ও জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। চলতি বছর ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা।
এবার পূর্ণাঙ্গ জিপিএ অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। তাদের মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন ছাত্র, ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন ছাত্রী। সেই হিসেবে ১৫ হাজার ৪২৩ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ–৫ পেয়েছে।
গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ–৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। গত সাত বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে।
গতকার সকালে গণভবনে ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ছাত্রদের পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীর ব্যবধান নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। ছেলেদের সংখ্যা কমার কারণ জানার পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিবিএসকে বলতে পারি জরিপের সময় এটা জানার চেষ্টা করতে। কী কারণে ছেলেরা কমবে? মেয়েরা বাড়লে খুশি হই। সমান সমান হলে ভালো। কিন্তু ছেলে কেন কমল এটা জানতে হবে। ছেলেরা পিছিয়ে আছে কেন জানতেই হবে। এটা যার যার বোর্ডে খোঁজ নেবেন। কিশোর গ্যাং কালচার দেখতে পাচ্ছি। কাজেই এটা খতিয়ে দেখতে হবে।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক পর্যায়ে পৃথকভাবে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি সুবিধা দেওয়া হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্ধারিত শর্তাবলীর আলোকে উপবৃত্তির আবেদন বিবেচনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের হিসাব বলছে, সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় মাধ্যমিক ও সমপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০২২–২৩ অর্থবছরে মোট ৫০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬১ জনকে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ২০ লাখ ২২ হাজার ৯৫ জন ছাত্রের বিপরীতে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৬ জন। সব মিলিয়ে তাদের দেওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০২২–২৩ অর্থবছরে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে ৫০৩ কোটি টাকার বেশি। ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭৫ ছাত্রীর বিপরীতে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৬১৮ জন ছাত্র এই সহায়তা পেয়েছে। ওই অর্থবছরে স্নাতক পর্যায়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭৯ কোটি টাকা। ৮৪ হাজার ২৮ জন ছাত্রীর বিপরীতে সহায়তা পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৯৬১ জন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এখন বিশেষভাবে ভাবতে হবে ছাত্রদের বিষয়ে, পরীক্ষার্থী হিসাবে ১ শতাংশ পয়েন্ট যেহেতু কম অংশগ্রহণ হয়েছে, এটার কারণ আসলে কী? পাশের হারের ক্ষেত্রে এবং জিপিএ ৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও ছাত্রদের সংখ্যা ছাত্রীদের চাইতে তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। সেই কারণটা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অনুসন্ধান করতে বলেছেন। তিনি বিশেষভাবে বলেছেন যে, ছাত্র এবং ছাত্রী, তারা সমানভাবে যাতে এগিয়ে যায়। সেই লক্ষ্যে আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।
মাধ্যমিকে শনিবার ছুটি মিলতে পারে ঈদের পর : গরমের কারণে ছুটির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শনিবার ক্লাস চালু রাখা থেকে সরে আসতে ঈদুল আজহা পর্যন্ত অপেক্ষার ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শনিবার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত কতদিন চলবে, এমন প্রশ্নে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের বর্তমান কারিকুলামের একটা দিক হচ্ছে, শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট সময় পাবে বাড়ির কাজটা করার জন্য। সেক্ষেত্রে সেটা বিবেচনায় নিয়ে শনিবার বন্ধ রাখা হয়েছিল। আরও অন্যান্য অনেক বিষয় ছিল। সেটা আমরা যেহেতু প্রায় নয়টি কর্মদিবস আমরা পাইনি, সুতরাং আমরা সেটা চেষ্টা করছি শনিবার আপাতত একটা ব্যবস্থা করে সেই কর্মদিবসগুলো আমরা যেন পাই। এটি স্থায়ী কোনো সিদ্ধান্ত নয়। আমরা অবশ্যই চাই, শিক্ষকদের বিশ্রামের প্রয়োজন আছে, শিক্ষার্থীদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তারা বাড়ির কাজ যথাযথভাবে করছে কিনা, সেটার জন্য সময় পাচ্ছে কিনা, সেটাও দেখার প্রয়োজন আছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অতিমাত্রায় চাপ দিয়ে, তাদেরকে প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষে পাঠ দান করার ক্ষেত্রে আমরা বেশি সুফল অর্জন করব, তা কিন্তু নয়। এটা সাময়িক একটা বিষয়।