পৌনে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। আইএমএফ বোর্ডের অনুমোদন পেলে তৃতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ পাবে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার, যা কিস্তিতে পূর্ব নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার এবং শর্ত পূরণে অগ্রগতি দেখতে বাংলাদেশ আসা আইএমএফ এর রিভিউ মিশন গত ২৪ এপ্রিল থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। খবর বিডিনিউজের।
রিভিউ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা আনন্দিত যে দ্বিতীয় কিস্তির অধীনে বাস্তবায়নকৃত নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের রিভিউ সম্পন্ন করেছি। কর্মকর্তা পর্যায়ে আমরা ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একমত হয়েছি, যা আগামী সপ্তাহে নির্বাহী পর্ষদের সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে ছাড় করা হবে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ বলেছে, নির্বাহী বোর্ড অনুমোদন দিলে মোট ইসিএফ (এঙটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি) ও ইইএফ (এঙটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি) এর অধীনে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার (আইএমএফ মুদ্রা এসডিআর ৭০ কোটি ৪৭ লাখ) এবং আরএসএফ (রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি) এর অধীনে ২২ কোটি ডলার (এসডিআর ১৬ কোটি ৬৮ লাখ) পাবে বাংলাদেশ। তিন খাত মিলিয়ে মোট এক দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হবে তৃতীয় কিস্তিতে। তবে চুক্তির শুরুতে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাতে এবার বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সে জায়গায় ইসিএফ ও ইইএফ এর বরাদ্দ দ্বিগুণ করে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার করেছে আইএমএফ। এভাবে মোট মঞ্জুরকৃত ঋণের মধ্যে তৃতীয় কিস্তিতে ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের এ পদ্ধতিকে ‘ফ্রন্ট লোড’ বলা হয় জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য বড় সুখবর। আইএমএফ ফ্রন্ট লোডের মাধ্যমে পরের কিস্তিতে অর্থ বাড়িয়ে দিল। মূল ঋণের পরিমাণ ঠিকই থাকল। অর্থ বরাদ্দ বেশি হলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে। আইএমএফ এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঋণ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সরকার কাঠামোগত সংস্কারে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ দেখিয়েছে, যার মধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় একটি। বৈশ্বিক অর্থনীতির ঝুঁকিগত প্রভাব প্রত্যাশার চেয়েও বেশি দেখা গেছে বাংলাদেশে, এখনো আমদানি করা ভোগ্যপণ্য ও খাদ্যমূল্য বেড়ে চলছে। অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় রাখার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমিয়ে দিচ্ছে। বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি।