ছাত্র জীবনে অনেক পেশা হাতছানি দেয়। ছোটবেলায় জীবনের লক্ষ্য রচনা লিখতে দিলে, অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী তার নিজস্ব ইচ্ছা বাস্তবায়নের স্বপ্ন লিখলেও, অধিকাংশই লিখে তারা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে। এ পর্যন্ত কেউ লিখেছে কিনা জানা নেই যে, আমি বড়ো হয়ে শিক্ষক হতে চায়। কেনইবা লিখবে তারা? তারা তো দেখতে পায়, শিক্ষক মানেই গরিব টাকা পয়সা তেমন নেই। সিনেমা নাটকে দেখা যায় হতদরিদ্র সংসার মানেই সেখানে একজন আদর্শ শিক্ষক।
আমাদের সমাজটা এখনো শিক্ষকের মর্যাদা তেমন দিতে শেখেন নি। পাশ্চাত্যের অনেক দেশেই আদালতে কাঠগড়াই কারও জন্য চেয়ার না থাকলেও একজন শিক্ষকের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়। একজন উচ্চপদস্থ মহান লোকের গল্প দিয়ে শুরু করি। উনি প্রতিদিন তার সন্তানের শিক্ষককে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসেন। শিক্ষক এতে বড়ই লজ্জিত বোধ করেন। কোনো একদিন তিনি বলে ফেললেন, আপনি এভাবে আমাকে এগিয়ে দিতে আসবেন না। এতে আমার অনেক লজ্জা বোধ হয়। উত্তরে মহান ব্যক্তি বলেন, দেখেন আমার সন্তান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আপনি হয়তো কখনো খেয়াল করেননি ওকে। ওকে বলা আছে যতক্ষণ আপনি চোখের আড়াল হবেন না ততক্ষণ সে যেন দাঁড়িয়ে থাকে। আর ও যাতে এই দায়িত্ব ভুলে না যায় এজন্য আমি গেটে এসে ওকে মনে করিয়ে দেয় যে, শিক্ষকের কতই না মর্যাদা। আরেকটি গল্প এমন যে, সন্তানের বাবা শিক্ষক আসার পর যতক্ষণ শিক্ষক সোফায় না বসতেন, ততক্ষণ উনিও দাঁড়িয়ে থাকতেন। গল্প দুটি মহান দুই ব্যক্তির। এই গল্প পড়ে আবেগতাড়িত হয়ে গেলাম। চোখের কোণে পানি আসে বৈকি এবং ভাবনায় আসে যাক শিক্ষকের মর্যাদা এখনো কোথাও না কোথাও বেঁচে আছে।
মহান পেশা হিসেবে পরিচিত শিক্ষকতা। শিক্ষক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, নায়ক, সেবক। কারণ এই শিক্ষকের হাত ধরেই এমন পেশার মানুষের সৃষ্টি হয়। শিক্ষক গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে অর্থনৈতিক চাকা এখনো নড়বড়ে, সেখানে শিক্ষকদের নিয়ে আলাদা করে ভাবনার অবকাশ নেই। শিক্ষক সমাজ এখনো বঞ্চিত লাঞ্ছিত। অভাবের ভারে জর্জরিত। অথচ দেশের যত মহৎ ও কল্যাণকর কাজ হয়ে থাকে, সবই শিক্ষক সমাজকে কাজে লাগিয়ে করে থাকে। বিনিময়ে স্বল্প পারিশ্রমিক পেয়েও তারা রাস্তায় নামেন না। দেশ গড়ার কারিগররাই দেশের স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেন। অবলীলায় সরকারের কি উচিত নয় এই সমাজকে সর্বোচ্চ আসেন উপনীত করা?
শিক্ষকের মর্যাদা বাড়লেই তবে শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে শিখবে। তারাও এ পেশার জন্য জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করবে। মহান পেশায় ব্রতী হবে। সকলের স্তরে যদি এতোটুকু ভাবতো শিক্ষকদের নিয়ে। যেমন তাদের কর্ম সময়, কর্মঘণ্টা, পরিধি, তাদের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক মুক্তি ইত্যাদি নিয়ে। কিংবা তাদের যদি সামাজিক মর্যাদা দিতো তাহলে আজ জাতি কলঙ্কিত হতো না। আশাবাদী মানুষ তাই আশায় বুক বাঁধি। স্বপ্ন দেখি শিক্ষক সমাজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। শিক্ষকের মর্যাদা সবার উপরে। শিক্ষাগুরুর শির উঁচু করে শীর্ষদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শীর্ষ মাথা নত করেই শিক্ষকের পদতলে আসীন হয়ে আছে। সকল শিক্ষকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কবিতাই বলতে চাই।
আগামীর পথ চলায় শিক্ষক থাকুক সবার উপরে। শিক্ষকের মর্যাদা যেন কখনো নিম্মস্তরে না এসে যায়। শিক্ষক যেন গর্ব করে বুক ফুলিয়ে বলতে পারে, আমি দেশ গড়ার কারিগর। আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে তৈরি করি।