শিশু জন্মের জন্য সাধারণত মানুষ প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ছুটেন। যেখানে গুণতে হয় ২০–৩০ কিংবা ৫০ হাজার টাকারও বেশি। শিশু গর্ভে আসার পর থেকেই এই টাকা জোগাড়ে হিমশিম খেতে হয় নিম্ন আয়ের মানুষদের। তবে এবার ডেলিভারির ক্ষেত্রে আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নরমাল ডেলিভারিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে এ সরকারি হাসপাতালটি। কর্তৃপক্ষ বলছে, গর্ভবতী ও তার স্বজনদের কাউন্সিলিং করে হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারিতে উৎসাহিত করার মাধ্যমে এ সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত চারমাসে ১৮৮টি নরমাল ও ১০টি সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে নবজাতক সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। এসময়ে মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুর হার ০% বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমন সফলতায় সাধারণ মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার হচ্ছে বলে জানা যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে ৫০ শয্যার রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরপর থেকে নরমাল ডেলিভারি করা হচ্ছে। তবে নরমাল ডেলিভারির পাশাপাশি যেনো সিজারিয়ান বাচ্চাও যেনো প্রসব করানো যায়, সেজন্য ২০০৬ সালে প্রসূতি রোগীদের জন্য সিজারিয়ান অপারেশন সেবা চালু করা হয়। অবকাঠামোগত সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকার পর অ্যানেস্থেসিয়া ও গাইনি চিকিৎসকের অভাবে দীর্ঘ ১৬ বছর সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ ছিল। তবে নরমাল (স্বাভাবিক) প্রসব চালু ছিল। পরে রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সার্বিক সহায়তায় গত বছরের ৯ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু করা হয়েছিলো সিজারিয়ান অপারেশন। এরপর থেকে অপারেশন কক্ষে জীবাণুমুক্তকরণ অটোগ্ল্যাব, রক্ত বন্ধ করার জন্য ডায়াথার্মি মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সক্রিয় রয়েছে।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এদিন একটি সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন সম্পন্ন করা হচ্ছে। সফল সিজার সম্পন্ন হওয়ায় মা ও নবজাতক দুইজনই সুস্থ রয়েছেন। এসিন অপারেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল আলম, গাইনী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নৌশীন তাসনুভা, এনেস্থেশিওলজিস্ট ডা. মো. নাজমুল হাসান, নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রিতা দাশ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শিহান বিনতে আলী, মেডিকেল অফিসার ডা. উম্মে কুলসুম ও মেডিকেল অফিসার ডা. আকীক দে।
এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল আলম জানান, গ্রামাঞ্চলে সাধারণত ধাত্রী দিয়ে ডেলিভারি করানো হয়। কিন্তু বাড়িতে ডেলিভারি করালে মা ও নবজাতকের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে। এক্ষেত্রে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বিনামূল্যে ডেলিভারিতে কোন ঝুঁকি নেই, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা অপারেশনের জন্যও উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালে ডেলিভারি করার ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তাই গেল চারমাসে উল্লেখযোগ্য হারে ডেলিভারি করানো সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে ডেলিভারি সেকশন আরও আধুনিকায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।