বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর এই দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বলী খেলা প্রবর্তন করেন। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বারকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামী–দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন। ১২ বৈশাখ জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষ্যে বসে এক বিরাট মেলা। বর্তমানে ঐ তারিখে ২/৩ কিলোমিটার জুড়ে আশে পাশে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে প্রভৃতি জমে ওঠে। হস্তশিল্পজাত বহু সামগ্রী এখানে বেচা কেনা হয়। ১২ বৈশাখ জব্বারের বলী খেলা হয়ে ওঠে বাংলাদেশের হরেক রকম কুটির শিল্পের এক প্রদর্শনী ও বিপণন কেন্দ্র। জব্বারের বলী খেলাকে উপলক্ষ্য করে চট্টগ্রামের বৈশাখী মেলা সর্বজনীন অনুষ্ঠানগুলোর অন্যতম। পয়লা বৈশাখ থেকে গ্রাম–নগরে ছোট–বড় অনেক মেলা শুরু হয়। স্থানীয় লোকেরাই বৈশাখী মেলার আয়োজন করে থাকে। কোথাও কোথাও এ মেলা সারা বৈশাখ মাস ধরে চলে। চট্টগ্রামে লালদিঘি মাঠে জব্বারের বলি খেলাকে কেন্দ্র করে শতবছর আগে থেকেই ১২ বৈশাখে যে মেলা বসে, তা হচ্ছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ মেলা। সাধারণত এ মেলা এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। চট্টগ্রামের এমন বস্তু বা পণ্যসামগ্রী নেই যা এ মেলায় পাওয়া যায় না। এ মেলাকে সর্বসাধারণের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। নাচ, গান, নাগরদোলা, পুতুলনাচ, বায়স্কোপ প্রভৃতি মেলার শতবছরের ঐতিহ্য বলে বিবেচিত। এ মেলা সকলের প্রাণে এনে দেয় খুশির বন্যা, ধুয়ে মুছে দেয় কর্মক্লান্তি ও সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে চট্টগ্রামে লালদিঘি মাঠে জব্বারের বলী খেলা উপভোগের। এ মেলা নতুন প্রজন্মকে বাঙালি ঐতিহ্য ধারণ ও লালনের অনুপ্রেরণা যোগায়।