বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সুশিক্ষক সাহিত্যানুরাগী মরহুম মৌলভী হাফিজুর রহমান বিএবিটি আমাদের মধ্যে যদিও বা নেই, তবে তাঁর জীবন, কর্ম, চিন্তা, চেতনা আর নিষ্কলুষ চরিত্র আমাদের সচকিত করে তোলে। তিনি ছিলেন কবি ও সাহিত্যিক। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত কবিতা সংকলনটি পড়ে আমাদের সেই ধারণা হয়। অনেকটা মরমি চেতনায় তিনি আপ্লুত ছিলেন। মাওলানা রুমীর বাঁশির সুরে সেই ছন্দ–ঝরণা ধারার মতো প্রবাহিত থেকেছে কবিতা থেকে কবিতাস্তরে। বই যেন ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তিনি ইংরেজি বাংলায় বেশ দক্ষ ছিলেন। তাঁর ছাত্রজীবন বেশ প্রসিদ্ধ ছিলো। তিনি প্রবন্ধও রচনা করেছেন। কবি দৌলত কাজী সম্পর্কে তিনি বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ইংরেজি বাংলা, আরবি ও ফার্সিতে বিস্তর পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁর ইংরেজি চিঠির বাক্যবিন্যাস উল্লেখ করার মতো। তাঁর হাতের লেখা চেয়ে থাকার মতো। বর্তমান এই অবক্ষয়ের যুগে তাঁর জীবন চেতনা আমাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি দেশের মাটি ও মায়ায় উদ্বেলিত ছিলেন। কখনো সম্মান প্রাপ্তির লোভকে প্রশ্রয় দেন নি। নীরবে নিভৃতে করেছেন তাঁর জীবন সাধনা। তিনি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বই প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে তাঁর প্রকাশিত বইগুলোর একটি ভল্যিয়ুম আজকের যুগে প্রকাশ করা গেলে ছাত্রছাত্রীরা আরও বিশদ জানতে পারতো। কিন্তু এর দায়িত্ব কে নেবে? আমাদের সমাজ ও জাতীয় জীবনে আমরা যোগ্যদের সম্মান করতে পারি নি। তাঁর স্বহস্তে লিখিত পত্রগুলো সংগ্রহ করে প্রকাশ করা হয় নি যা‘ প্রকাশিত হলে আমাদের মন–মানস আরো সমৃদ্ধ হতো। চেতনার প্রবাহকে অর্থবহ করার প্রয়োজনীয়তা আছে আমাদের জন্যে। হাফিজুর রহমান বিএবিটি‘র চিন্তা–চেতনা, ব্যক্তিত্ব একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তাঁর দক্ষতা, কবি প্রতিভা, মরমী অভিলাষ, সাহিত্য–সংস্কৃতি, জীবন সমালোচনা আমাদের অনুধাবনের বিষয়। এই পৃথিবীতে আলোকিত মানুষ জন্মগ্রহণ করে আবার বিদায় নেয় এটিই চিরন্তন রীতি। কিন্তু জন্ম–মত্যুর মধ্যবর্তী জীবনটাই যুগযুগ ধরে মানুষের জীবন পথ চলার নির্দেশ দেয়। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাকে বলেছেন পরম মানবিক সত্তা‘। এক অসাধারণ মানুষ হিসেবে বিবেচিত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা সপ্তাহে প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক, সুসাহিত্যিক মৌলভী হাফিজুর রহমান বিএবিটি। তাঁর সমগ্র জীবনদর্শন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি যেন আমাদের জন্য এক অনিন্দসুন্দর পথের দিশা। ছাত্রজীবনে তিনি প্রতিটি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ মেধার স্বাক্ষর রেখে উচ্চশিক্ষা লাভ করে প্রাচুর্যের মোহকে দূরে রেখে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়ে ছিলেন। ফিরে এসেছিলেন গ্রামের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালাতে। জ্ঞানের সমুদ্র ছিলেন তিনি। আবার সেই জ্ঞানকে চর্চা করেছেন একজন প্রকৃত সাধকের মতো। যথার্থ অর্থে তিনি মানুষ গড়ার কারিগর ছিলেন। বলা যায়, তিনি এমন এক বাগান সাজাতে পেরেছিলেন যেখানে ফুটেছে হাজারো প্রস্ফুটিত গোলাপ। এই যুগে তাঁর মতো নির্লোভ শিক্ষক পাওয়া দুর্লভ।