বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের ভল্টের ভেতরে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ভল্ট খুলতে না পারায় কোনো টাকা নিতে পারেনি লুটেরা বাহিনী। এদিকে ভল্টের চাবি না দেয়ায় ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। গতকাল বুধবার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ভল্ট খুলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। সত্যতা নিশ্চিত করে সোনালী ব্যাংক বান্দরবান জেলা প্রধান শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. ওসমান গনি জানান, ভল্ট খুলতে না পারায় ব্যাংকের কোনো টাকায় লুটেরা নিতে পারেনি। ভল্ট খুলে ব্যাংকের সব টাকা সুরক্ষিত পাওয়া গেছে। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের এখনও খোঁজ মেলেনি।
এদিকে বুধবার রুমায় লুট হওয়া ব্যাংক পরিদর্শন করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। ব্যাংক লুট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট ও ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের ঘটনায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের মুক্তিপণ বাবদ পরিবারের কাছে মোবাইলে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে অপহৃতের স্ত্রী বান্দরবান ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা মাইছুরা ইশফাত কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
পরিদর্শনকালে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, ব্যাংক লুটের ঘটনায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ৮টি চায়না রাইফেল, ২টি এসএমজিসহ ১০টি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি ও আনসার সদস্যদের ৪টা শর্টগান ৩৫ রাউন্ড গুলিসহ মোট ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে সন্ত্রাসীরা। ক্রাইমটিম ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তদন্ত করবে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত করা হচ্ছে কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে। যৌথ বাহিনী সম্মিলিতভাবে লুটেরাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপহৃতের মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি জানা নেই।
রুমা সোনালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়াইচিং মারমা জানান, ডরমিটরি বাইরে যুব উন্নয়ন অফিসের পাশে দোকানে চা খেতে গেলে মুখে কালি লাগানো অপরিচিত ৩ জন লোক অস্ত্রের মুখে দাঁড় করায় এবং তার শরীরে তল্লাশি চালিয়ে পকেটে থাকা ১৫শত টাকা ও ব্যাংকের চাবি নিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীরা ব্যাংকে গিয়ে টাকা লুট করার চেষ্টা করে।
পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আসার পর ব্যাংকে গিয়ে দেখেন অফিস সরঞ্জাম গুলো তছনছ করা হয়েছে। এ ছাড়া তার জানামতে ভল্টের ভেতর ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জমা ছিল। ভল্টের দুইটি চাবির মধ্যে তার কাছে ১টি এবং অপহরণের শিকার ম্যানেজারের নিকট অপরটি থাকত। ভল্ট খোলতে না পারায় কোনো টাকা নিতে পারেনি লুটেরা। ব্যাংকে স্পেশাল টিম এসে ভল্টখুলে সব টাকা অক্ষত অবস্থায় পেয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সোনালী ব্যাংকের ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, ক্রাইমসিন টিমের উপস্থিতিতে ভল্ট চেক করে ব্যাংকের সব টাকা সুরক্ষিত রয়েছে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার ও লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর অভিযান চালাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এদিকে তিনটি ব্যাংক লুট, ম্যানেজারকে অপহরণ এবং ১৪টি অস্ত্র লুটের প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বান্দরবানের রুমা ও জেলা সদরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান। অন্যদের মধ্যে নাগরিক পরিষদের নেতা মো. আবুল কালাম, শাহা জালাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এদিকে রুমা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশের আইজিপি। পরিদর্শনকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন বলেন, সন্ত্রাস দমনে সরকারের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে। আমাদের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। কোনো দুষ্কৃতকারীর এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতার কোনো ঘাটতি আছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সতর্ক ছিলাম। তাই তারা দ্রুত পালিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। লুট করা অস্ত্র উদ্ধার এবং অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারে যৌথ বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকরে কাজ করছে পুলিশ।












