আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদুল ফিতর। ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরবেন লাখো মানুষ। আর সড়ক পথেই বাড়ি ফেরেন বেশি মানুষ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানোর হিড়িক ফেলছেন অসাধু পরিবহন ব্যবসায়ীরা। পুরনো লক্কর–ঝক্কর গাড়িগুলোতে লাগছে নতুন রংয়ের প্রলেপ। টুকটাক মেরামতের কাজও চলছে গাড়িগুলোতে। তাতে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোই হয়ে উঠছে ‘নতুন গাড়ি’। মেরামত করা গাড়িগুলো রাস্তায় নামানোর পর দেখে বোঝার উপায় নেই গাড়িগুলো লক্কর–ঝক্কর ছিল। ঈদে ফিটনেসবিহীন এই সব গাড়ি রাস্তায় নামার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার আশংকা করছেন যাত্রীরা। আর উৎসবের সুযোগে ফিটনেসবিহীন বাস নামানোর পাঁয়তারা করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি পুলিশ ও বিআরটিএর। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী বলেন, সাধারণত এক বছরের জন্য বাসের ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। সনদ বছর বছর নবায়ন করতে হয়। ফিটনেস সনদ ছাড়া কোনো যানবাহন সড়কে চলাচল করার নিয়ম নেই। এ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালিত হবে।
ঈদ এলেই চট্টগ্রামের এ কে খান, অলংকার, বহদ্দারহাট টার্মিনাল, নতুন ব্রিজ এলাকার ওয়ার্কশপে পুরোনো বাস মেরামত শুরু হয়। রোজার মাঝামাঝিতেই বাসগুলো মেরামতের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। ওয়ার্কশপগুলোতে পড়ে থাকা লক্কর–ঝক্কর গাড়ির আসন মেরামত, রঙের কাজসহ চলে সাজসজ্জার কাজও। সরেজমিনে বেশ কয়েকটি গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কসপে গিয়ে দেখা যায় লক্কর–ঝক্কর বাস মেরামতের হিড়িক পড়ে গেছে। ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িগুলো জোড়াতালি দেয়া হচ্ছে ওয়ার্কশপে। মিস্ত্রিরা পুরাতন গাড়ি মেরামতে দিন–রাত কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো গাড়ির ইঞ্জিন, সড়ক দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া, ব্রেকে সমস্যা কিংবা সিটগুলো ছেঁড়া। আবার কোনো গাড়ির বডিতে রং–চং নেই। ঈদের সময় বহু বছরের পুরাতন এসব গাড়িগুলো মেরামত করে নতুন সাজে রোডে নামানোর জন্য আনা হয়েছে ওয়ার্কশপে।
বডি ঝালাইয়ে ব্যস্ত মো. কবির হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, পুরাতন পাত সরিয়ে বাসের নতুন বডি ঝালাই করা হছে। এরপর রঙ করে ফিনিশ দেওয়া হবে।
ওয়ার্কশপের শ্রমিকদের সাথে কথা জানা যায়, ১০ থেকে ১৫ দিন আগ থেকে বাসগুলো এসেছে। কাজ অনেকটা শেষের পথে। তাদের মধ্যে পুরান গাড়ি মেরামতের কারিগর আলম মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানালেন, ঈদের সময় পুরাতন গাড়ির কাজ সবচেয়ে বেশি থাকে। ইঞ্জিনে ত্রুটি, বডিতে রং–চং নেই, সিট কভার নষ্টসহ নানা সমস্যা নিয়ে মালিকরা তাদের গাড়িগুলো গ্যারেজে নিয়ে আসেন। আমরা সেগুলো মেরামত করে নতুন সাজে সাজিয়ে দিলে বোঝার উপায় নেই গাড়ি পুরাতন ছিল।
রঙ মিস্ত্রি মো. নিজাম ইউনিক পরিবহনের একটি বাসে রঙ লাগাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, বাসটি অন্তত ৫ থকে ৬ বছরের পুরোনো। আসন রয়েছে ৩৬টি। রঙ লাগানো ও মেরামতের কাজ করতে ১০ থেকে ১২ দিন লাগছে। রঙের পেছনেই খরচ হয়েছে ৪৩ হাজার টাকা।
আরো একটি ঈগল বাস রঙ করছিলেন তিন শ্রমিক। তাদের একজন বলেন, বাসটি ৪৮ আসনের; চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কে চলাচল করে। আসনগুলো মেরামত করা হয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তে রঙ করা হচ্ছে। ঈদের আগের দিন থেকে সড়কে নেমে যাবে বাসটি।
আলম নামে এক শ্রমিক বলেন, ঈদের কারণে এখন চাপ বেশি। সারাদিন বাসগুলো মেরামত ও রঙের কাজ করতে হয়। ঈদের আগে সব ডেলিভারি দিতে হবে। রফিক নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ইঞ্জিনের কাজ, রঙের কাজ সবশেষ সিট পাল্টানোর কাজও চলছে। আমরা দিনরাত কাজ করছি।
বাস টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদেই বাস মালিকদের ব্যবসা ভালো থাকে। মূলত যাত্রী টানতে পুরোনো বাসগুলো রঙিন করে আকর্ষণ বাড়ানো হচ্ছে। বাসের চালক কুদ্দুস মিয়া জানালেন, ঈদের সময় প্রত্যেক যাত্রীই চায় রং–চং করা সুন্দর গাড়িতে উঠতে। তাই বাসের ভেতরের সিট ও বডিতে রংয়ের কাজ করার জন্য আনা হয়েছে। ঈদের সময় গাড়ির ফিটনেস না থাকলে পুলিশ ও সার্জেন্টরা বিরক্ত করে। তাই গাড়ি ‘পালিশ’ করা হচ্ছে। আর সারা বছরের চাইতে ঈদের সময় কিছু বাড়তি টাকা কামানো যায়।
এদিকে বাসযাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, রং–চং মেখে গাড়িগুলো রোডে নামানোর ফলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। আসলে এই গাড়িগুলো হচ্ছে উপরে ফিটফাট এবং ভেতরে সদরঘাট। লক্কর–ঝক্কর বাস মহাসড়কে চলাচলে বন্ধ না হলে ঈদে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। প্রশাসনের নজরদারি থাকলে ঈদে পুরনো ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন।