মহিমচন্দ্র দাস (১৮৭১–১৯৪০)। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সংগ্রামীকর্মী এবং অবিভক্ত বাংলার জনপ্রিয় নেতা। দেশপ্রিয় যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত‘র সহযোগী হিসাবে এবং চট্টল গৌরব নামে সুপরিচিত এবং নিষ্ঠাবান কংগ্রেসকর্মী। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেস সভাপতি। মহিমচন্দ্র দাসের জন্ম ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বর্তমানে পটিয়া উপজিলার ভাটিখাইনে। পিতা ছিলেন যাত্রামোহন দাস। গ্রামের পাঠশালার শিক্ষা সমাপনান্তে মেধাবী ছাত্র মহিমচন্দ্র চট্টগ্রামের পটিয়া উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয় থেকে রায়বাহাদুর বৃত্তিসহ ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে এন্ট্রান্স, পরে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ.এ এবং ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। স্নাতক হওয়ার পর তিনি কিছুদিন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আইন পরীক্ষা পাশের পর চট্টগ্রামের জেলা আদালতে আইনজীবী হিসাবে যোগ দেন। আইনজীবীর কাজকর্মের পাশাপাশি মহিমচন্দ্র স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করেন। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ–প্রতিরোধ আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা নেন। তিনি ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক পত্রিকা পাঞ্চজন্য–এর প্রকাশনা শুরু করেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের বিরূপ মনোভাবের কারণে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে আইন ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন ও চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হন। পরে অবশ্য জননায়ক যাত্রামোহন সেনের বিলাত ফেরত ব্যারিস্টার পুত্র দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত চট্টগ্রামের রাজনীতিতে অবতীর্ণ হলে মহিমচন্দ্র তাঁকে কংগ্রেস সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়ে নিজে সম্পাদক হন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দেই কালীকিঙ্কর চক্রবর্তীর সাপ্তাহিক জ্যোতিঃ পত্রিকা দৈনিকে রূপান্তরিত হলে তিনি সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য এটি ছিলো সেসময়ে কলকাতার বাইরে মফস্বল হতে প্রথম প্রকাশিত দৈনিক তথা বাংলাদেশের প্রথম বাংলা দৈনিক। সরকারি রোষে এই পত্রিকাটিও ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে লবণ সত্যাগ্রহ পরিচালনা করে কারারুদ্ধ হন। কারাগার হতে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হন এবং আমৃত্যু ওই পদ অলংকৃত করেন। মহিমচন্দ্র দাস ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।