চাক্তাইসহ কয়েকটি খাল পুনরায় খনন হচ্ছে

আগামী বর্ষায় নগরে জলাবদ্ধতা সহনীয় রাখা ।। এই কাজ করছে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনী ।। খাল সংলগ্ন নালাগুলো পরিষ্কারে গুরুত্ব

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ৩১ মার্চ, ২০২৪ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আগামী বর্ষায় শহরের জলাবদ্ধতা ‘সহনীয়’ রাখতে চাক্তাইসহ কয়েকটি খাল পুনঃখনন করছে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এর মধ্যে আগামী ঈদুল ফিতরের আগেই চাক্তাই খালের খনন কাজ শেষ করতে চায় সংস্থাটি। তবে কেবল খাল খনন করলেই সুফল মিলবে না। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে খাল সংলগ্ন নালানর্দমাগুলো পরিষ্কার করতে হবে। এজন্য নালানর্দমাগুলোর রক্ষক সিটি কর্পোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ আজাদীকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে চাক্তাই খালের পুনঃখনন কাজ চলছে। ঈদের আগেই সম্পূর্ণ খনন কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা করছি। চাক্তাই খালের অনেকগুলো স্পটে কাজ চলছে। বহদ্দারহাট পুলিশ বক্স থেকে চামড়ার গুদাম পর্যন্ত পুরো অংশে কাজ চলছে। চাক্তাই ডাইভার্শনের এক্সেস রোড থেকে ঈছহাকের পুল পর্যন্ত অংশেও কাজ চলছে। দেওয়ান বাজারে চাক্তাই খালে পুনঃখননের কাজ চলছে। চাক্তাই খাল নিয়ে চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, খালের কিছু কিছু জায়গায় নিচু ব্রিজকালভার্ট আছে, যেগুলো পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। সেখানেও পরিষ্কারের চেষ্টা করছি। চাক্তাই ছাড়া আর কোন কোন খালে পুনঃখনন কাজ চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাক্তাই ডাইভার্শন, বির্জা খাল, বাকলিয়া খাল, মির্জা খাল, মির্জা এঙটেনশন ও মহেশখালে প্রাধান্য দিচ্ছি। এদিকে দুই নম্বর গেট থেকে নাসিরাবাদ, মুরাদপুর হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। বাকলিয়ার ওমর আলী মাতবর রোড, মোহাম্মদীয়া হাউজিংসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে ফোকাস করার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, শুধু খালগুলো পরিষ্কার করলে হবে না। আমরা খালগুলো পুনঃখনন করে দিলাম, নাব্যতা বৃদ্ধি করে খালগুলো পানি প্রবাহের জন্য উপযুক্ত করে দিলাম। কিন্তু খাল সংলগ্ল ড্রেনগুলো যদি অপরিষ্কার থাকে এবং সেখান থেকে পানি যদি খালে না আসে তাহলে তো সুফল আসবে না। প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টার্শিয়ারি বেয়ে যদি খালে পানি না নামে তাহলে কোনো লাভ হবে না। তখন কিন্তু জনগণেরই ভোগান্তি হবে। তাই এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় কাউন্সিলরদের এগিয়ে আসতে হবে। খালের পাশে নালাগুলো পরিষ্কার করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকায় সিডিএর গৃহীত চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পটি জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্প। মূল প্রকল্প ব্যয় ছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। সংশোধনের পর ব্যয় বেড়েছে ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৮ সালে সিডিএর সঙ্গে চসিকের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। তবে প্রকল্পের কাজ চলাকালে প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা হয়েছে নগরে। গত বর্ষায়ও কয়েকবার ডুবেছে নগর।

জলাবদ্ধতার কবলে পড়লে নগরবাসীর অভিযোগ থাকে, খাল খনন করা হয়নি, ভরাট হয়ে থাকায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। সিটি মেয়রও একাধিকবার বলেছেন এমনটি। গত ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেলায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, নগরের খাল থেকে মাটি উত্তোলনে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আমি যখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাই তখন দেখতে পাই, ড্রেনের পাড় বাধাই করা হচ্ছে। এটা দৃশ্যমান। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে সেগুলো (খাল) কতটুকু খনন করা হচ্ছে। মাটি উত্তোলন করা না হলে পানি উঠবে। তাছাড়া নগরবাসীরও অভিযোগের তীর থাকে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের দিকে। তাই এবার আগেভাগেই খাল পুনঃখনন শুরু করে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান বিবেচনায় ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, শমসেরপাড়া, বাদুরতলা, ঘাসিয়াপাড়া, বারইপাড়া, ফুলতলা, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার ও আগ্রাবাদ এলাকায় জলাবদ্ধতার পরিমাণ একটু বেশি হয়েছে। তাই এলাকাগুলোর সংশ্লিষ্ট খালগুলোকে খনন করায় জোর দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে খালগুলোর সাথে সম্পৃক্ত প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি নালাগুলো যদি সিটি কর্পোরেশন পরিষ্কার রাখে তাহলে আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতার কিছুটা সুফল মিলবে।

এ বিষয়ে ১২ মার্চ প্রেস ব্রিফিং করে আগামী বর্ষার আগে খালগুলো খনন ও পরিষ্কার করার ঘোষণা দেন সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক। এতে আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধবাবর আলীর এবারের লক্ষ্য মাউন্ট এভারেস্ট ও মাউন্ট লোৎসে জয়