রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের দুর্গম চান্দবীঘাট পাড়ায় বাবা–মেয়েসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনা অজ্ঞাত রোগে নয়, স্বাভাবিক রোগে মৃত্যু। তবে গ্রামের একটি গাছ কেটে ফেলার পর, ওই গাছের ভূত মানুষের ওপর ভর করার গুজবে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। ওই এলাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে যাওয়া চিকিৎসক দলের প্রধান এবং বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মংক্যছিং মারমা সাগর এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি রোগটিকে অজ্ঞাত রোগ নয় বলে জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি থেকে বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মংক্যছিং মারমার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের চিকিৎসক দল দুর্গম চান্দবীঘাট পাড়ায় গিয়ে ঘুরে ঘুরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন। এসময় পাড়ায় মোট ১২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফিরে আসেন ছয় জনের চিকিৎসক দলটি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মংক্যছিং জানান, যারা মারা গিয়েছেন তারা আসলে অজ্ঞাত রোগে নয়, তাদের স্বাভাবিক রোগেই মৃত্যু হয়েছে। তাদের কেউ লিভার, কিডনি ও প্যারালাইসিসজনিত সমস্যায় আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। হঠাৎ করে তারা কেউ মারা যাননি। যারা অসুস্থ আছেন তারা এমনি সর্দি, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত; তাদেরকে আমরা চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে আসছি। এর আগে পাহাড়ি বৈদ্যদের দিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা করে লতা–পাতা সিদ্ধ করে খাওয়ার ফলে তারা এই সমস্যায় পড়েছিল।
তিনি আরও জানান, সেখানে একটি পাকুজ্জা গাছ কাটার পর থেকে মানুষ মারা যাওয়ায় ভূতের কারণে এই পরিণতি হচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়েছে। পাড়াবাসীরা এখনো কুসংস্কারে বিশ্বাসী হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা তাদের সচেতন করেছি, বুঝিয়েছি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ডালিম কুমার চাকমা নামের এক যুবক সেই এলাকার মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওষুধ দিতেন। কিন্তু এই ঘটনার মধ্যেই ডালিম ও তার মেয়ে সোনি চাকমা মারা যাওয়ার পর গ্রামের ভূতের গুজব বেড়ে যায়।
প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের দুর্গম চান্দবীঘাট পাড়ায় বাবা–মেয়েসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। পাঁচজনই শরীর ব্যথা, জ্বর, বমি উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় গাছ কাটার ফলে ভূত মানুষের ওপর ভর করার কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।