যেভাবে জাহাজগুলো জলদস্যুর কবলে পড়ে

| বৃহস্পতিবার , ১৪ মার্চ, ২০২৪ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

গভীর সমুদ্রে পণ্যবাহী জাহাজগুলো কিভাবে জলদস্যুদের কবলে পড়ে? বিশেষজ্ঞ ও জাহাজের দুজন সাবেক ক্যাপ্টেন জানিয়েছেন, পণ্য বোঝাই থাকায় জাহাজগুলো সাধারণত ধীরে চলে আন্তর্জাতিক নৌ রুটে। এমভি আব্দুল্লাহর মতো আকারের জাহাজগুলোতে ৩০ থেকে ৪০ টন পণ্য বোঝাই থাকে। বেশি পণ্য বোঝাই থাকায় বেশির ভাগ জাহাজের গতি থাকে ১৮ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল। এ কারণেই গতি থাকে কম। জলদস্যুরা যখন কোনো জাহাজকে টার্গেট করে তখন তারা ছোট ছোট বোটে অস্ত্র নিয়ে তিন থেকে চারদিক থেকে আক্রমণ করে। তিন চারদিক থেকে যখন আক্রমণ করে তখন সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যায়। সোমালিয়ার জলদস্যুর হাতে মঙ্গলবার জিম্মি হওয়া জাহাজটির বেলায়ও তাই দেখা গেছে। খবর বিবিসি বাংলার।

জাহাজের সাবেক ক্যাপ্টেন ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘জলদস্যুরা যখন জাহাজ দখলে নিতে আসে তখন তাদের কাছে হুক থাকে, অস্ত্র থাকে, টেলিস্কোপ ও ল্যাডার থাকে। তিন চারদিক থেকে ত্রিশ চল্লিশজন অস্ত্রসহ এসে জাহাজে উঠে পড়ে। ওঠার পরই তাদের কেউ জাহাজের ইঞ্জিন রুমে, কেউ লোকদের জিম্মি করে। কেউ জাহাজ স্লো ডাউন করে। কখনো প্রয়োজনে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধও করে দেয়। সাধারণত জলদস্যুরা জাহাজটিতে ওঠার পরই কমিউনিকেশনের সব পথগুলো তারা বন্ধ করে দেয়। এরপর ডাকাতি শুরু করে। যাদের কাছে টাকা পয়সা আছে, অন্য দামি জিনিসপত্র যা আছে সেগুলো নিয়ে নেয়। মোবাইল নিয়ে নেয়। টোটাল কমিউনিকেশন অফ করে দেয় বহির্বিশ্বের সাথে। তারপর জাহাজে থাকা ক্রুদের সাহায্যে এই জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রিত এরিয়ার কাছাকাছি যে কোনো একটি পোর্টে নিয়ে যায়। সেখানে নোঙ্গর করে দুয়েকদিন পর গিয়ে তারা মুক্তিপণ দাবি করে। এই মুক্তিপণ দাবি করা হয় মালিক কোম্পানির কাছে।’

ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যেকটা জাহাজেই মালিকানা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য থাকে। কার সাথে যোগাযোগ করবে, তার নাম নম্বর, সিকিউরিটি অফিসার যে থাকে তার নাম ও নম্বর লেখা থাকে জাহাজে। প্রত্যেকটি জাহাজে স্যাটেলাইট ফোন আছে। সেটা দিয়ে তারা মালিককে ফোন দিবে।’

কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘নরমালি এ সমস্ত ক্ষেত্রে যেটা হবে আল্টিমেটলি জলদস্যুরা জাহাজের ফুল কন্ট্রোল নেওয়ার পর তারা তাদের সুবিধামতো সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করবে। তারপর আমরা জানতে পারবো আসলে তাদের চাহিদা কী!’ সেটা হতে এখনো দেড় থেকে দুই দিন সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।

এখন থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে ২০১০ সালে ৫ ডিসেম্বর এই কেএসআরএম এর মালিকানাধীন এসআর শিপিং গ্রুপের আরেকটি জাহাজও সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। নিকেলভর্তি ওই জাহাজের ২৫জন নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়েছিল। দীর্ঘ চেষ্টার পর ১০০ দিনের মাথায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা। পরে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তখনও ঐ জাহাজটি ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম। তিনি বলেন, এর আগে যখন তারা আমাদের আমাদের ঐ জাহাজটাকে দখলে নিয়েছিল সেটা ছিল সোমালিয়া থেকে অনেক দূরে। সে অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এতটুকু বলতে পারি এরকম ক্ষেত্রে কী হয় তা নিয়ে আমাদের মোটামুটি এদিক থেকে অভিজ্ঞতা আছে। তবে এসব ক্ষেত্রে ক্রুদের কিছুই করার থাকে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘সেকেন্ড পার্টির’ মাধ্যমে নাবিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধঈদ-নববর্ষ মিলিয়ে ছয় দিন ছুটির আশা