দিনে শ্রমিক সেজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ, আর রাতে সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাতি করে সবকিছু লুটে নেওয়া তাদের কাজ। সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের এই সদস্যরা অবশেষে ধরা পড়েছে পুলিশের জালে। গতকাল রোববার বিকালে গ্রেপ্তার ডাকাত নাহিদ হাসান (২১) চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারিক হাকিম জোনায়েদ আহমেদের আদালতে এবং ডাকাত মো. সোহেল (২০) চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারিক হাকিম ফারদিন আহম্মেদের আদালতে ডাকাতির সত্যতা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, তারা মহাসড়কে নির্জন কোনো স্থানে এসে টার্গেট করা গাড়িকে ওভারটেক করে গতিরোধ করে গাড়িতে থাকা ড্রাইভারসহ যাত্রীদের দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, সুইচ গিয়ার, চাপাতি, স্টিলের পাইপ দিয়ে মারপিট করে ও প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত–পা ও মুখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি এবং মালামাল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা ডাকাতি করা মালামাল এবং গাড়িগুলো বিভিন্ন চোরাকারবারিদের কাছে বিক্রি করে দেয়। একই উপায়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের গাড়িকেও টার্গেট করে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুটে নেয় তারা। যখন মহাসড়কে ডাকাতি করা সম্ভব হয় না, তখন বাড়িঘর এবং দোকানপাটে তারা ডাকাতি করে থাকে। তারা আরো জানায়, ডাকাতির আগে ডাকাত সর্দারের নির্দেশনা অনুযায়ী একসঙ্গে মিলিত হতেন তারা। ডাকাতির মাধ্যমে মোটা অংকের একটি ফান্ড সৃষ্টি করার পরিকল্পনা হয় তখন। এ সময় ডাকাত সর্দার দিনে শ্রমিকের ছদ্মবেশে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতে অন্য ডাকাত সদস্যদের নির্দেশ দেন। সেই সাথে সবাইকে একসাথে শপথ করান–ডাকাতি করতে গিয়ে যাই ঘটুক না কেন, তারা সবাই একসঙ্গে থাকবে। ডাকাতিকালে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও প্রকাশ করবে না অন্যদের নাম। ডাকাত সর্দারের পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ সংগ্রহে গত ৬ ফেব্রুয়ারী শ্রমিকের ছদ্মবেশে সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের উত্তর ফেদাইনগর এলাকা ঘুরে বেড়ান তারা। পরে গভীররাতে সাংবাদিক হাসান ফেরদৌসের বাড়িসহ তিনটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটায়। এ সময় লুটে নেয় নগদ টাকা, মুঠোফোন ও স্বর্ণালংকার।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজীব পোদ্দার বলেন, জবানবন্দীকালে ডাকাত সোহেল জানিয়েছে, তার স্ত্রী খুবই অসুস্থ। তাকে মাসখানেকের মধ্যে অপারেশন করানো লাগবে। তাই তার নগদ টাকার খুবই প্রয়োজন। কোন উপায় না পেয়ে ডাকাত সর্দার ফজু’র নির্দেশনা অনুযায়ী অন্য ডাকাতদের সাথে মিলে এ তিন বাড়িতে ও মহাসড়কে একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাদের কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র না থাকায় ডাকাতিকালে পরিবারের লোকজনকে ভয় দেখাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যেত।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি কামাল উদ্দিন বলেন, ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর থেকে ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে পুলিশ। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ৮ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে নাহিদ হাসান ও সোহেল নামে ডাকাত দলের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাতিকালে লুন্ঠিত মোবাইল ও টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ডাকাতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সমপ্রতি ঘটে যাওয়া ডাকাতির সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেন। ওসি আরো বলেন, গ্রেপ্তার সকলেই পেশাদার ডাকাত। তাদের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানাসহ আশপাশের থানায় ডাকাতি, দস্যূতা, অস্ত্র ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।