খান বাহাদুর আহছানউল্লা(১৮৭৩–১৯৬৫)। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, ও সমাজ হিতৈষী। বিশ শতকের গোড়ার দিকে ভারতবর্ষে পিছিয়ে থাকা মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর সুফী তিনি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জের নলতা মোবারকনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সী মোহাম্মদ মুফিজ উদ্দীন এবং মায়ের নাম মোছাম্মাৎ আমিনা বেগম। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে কৃতিত্বের সাথে এন্ট্রান্স, হুগলী কলেজ থেকে ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে এফ.এ এবং কলিকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ পাস করেন। এরপর ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ পাস করেন। কর্মজীবনে ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে সুপারনিউমারি টিচার হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। অল্প কিছুকালের মধ্যেই তিনি উচ্চতর বেতনে ফরিদপুরের অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাখেরগঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ পান। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তাঁর কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিভিশনাল ইন্সপেক্টর পদে উন্নীত হয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিক্ষার প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। এরপর ‘বঙ্গদেশের মোছলেম শিক্ষার সহকারী ডিরেক্টর‘ হিসেবে তিনি পদোন্নতি লাভ করেন এবং ৫ বছর এ পদে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে কলকাতায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি কিছুদিন অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের ডিরেক্টর পদে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে ৫৫ বছর বয়সে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। চেতনায় তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। সে সময় বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষা শেখার প্রবণতা ছিল বেশি। আহছানউল্লাহ ব্যাপকভাবে বাংলা ভাষা শিক্ষায় তাদের উদ্বুদ্ধ করেন। বিখ্যাত জনহিতকর প্রতিষ্ঠান ‘আহছানিয়া মিশন’ তাঁরই উল্লেখযোগ্য কীর্তি। শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে প্রগতিশীল ভূমিকার জন্য তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দেওয়া হয়। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘বঙ্গভাষা ও মুসলমান সাহিত্য’, ‘হিস্ট্রি অব দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড’, ‘আমার জীবনধারা’, ‘ছুফি ও সৃষ্টিতত্ত্ব’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।