টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই : ভারতের স্বীকৃতির প্রতিবাদ জানাবে মন্ত্রণালয়

| রবিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

টাঙ্গাইলের শাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির ঘটনায় বাংলাদেশে ‘বিস্ময়ের মধ্যে’ করণীয় ঠিক করতে বৈঠক ডেকেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর। এ নিয়ে বৈঠকে বাংলাদেশের পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি ভারতের দেওয়া স্বীকৃতির বিষয়ে আপত্তি ও প্রতিবাদ জানানোর কথা ভাবছে অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘বৈঠকে খুব সম্ভবত ভারতের দাবির প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।’ আজ নরোববার শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন এ অধিদপ্তরে বৈঠকটি হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক (ট্রেড মার্কস) মো. জিল্লুর রহমান। খবর বিডিনিউজের।

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আমাদের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই দাবির পরের দিন আমাদের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন থাকায় আমরা কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারিনি। তবে আমরা এরই মধ্যে জরুরিভিত্তিতে অধিদপ্তরে বৈঠক ডেকেছি। বৈঠকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে আমাদের মহাপরিচালক ও সচিব মহোদয়কে জানানো হবে।’

জিআই হচ্ছে কোনোও একটি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক। কোনো পণ্যের একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থল দিয়ে এর খ্যাতি ও গুণাবলী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। জিআই চিহ্নিত করতে উৎপত্তিস্থলের নাম যেমনশহর, অঞ্চল বা দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বৈশ্বিকভাবে এই জিআই বা পণ্যের স্বত্ত অনুমোদন দেয় ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও)

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের ঐতিহ্য রক্ষায় উদ্যোগ না থাকায় প্রায়ই বাংলাদেশ কয়েকটি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি হারাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় শত শত বছরের ঐতিহ্যের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি দাবি করে সেটির স্বীকৃতি নিজেদের পক্ষে নিয়েছে প্রতিবেশী দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর টাঙ্গাইলে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা মানববন্ধন থেকে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি বাংলাদেশের করার দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকার বেইলি রোডের শাড়ির দোকান ‘টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির’ এর মালিক মুনিরা এমদাদ বলেন, ‘এর আগে ঢাকাই জামদানিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের জিআই ভারত নিয়ে যাওয়ার পরও আমরা সচেতন হতে পারিনি।’ সমপ্রতি টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই দাবি করে ভারত সরকার। ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) এর কাছ থেকে অনুমোদনও পেয়ে যায় তারা। এক মাস আগেই পণ্যটিকে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, পূর্ববর্ধমানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

ভারতের এই পদক্ষেপে বিস্মিত ১৯৮২ সাল থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি এবং তাঁতিদের নিয়ে কাজ করে আসা মুনিরা এমদাদ। তিনি বলেন, ‘বসাকরাই তো এখনও টাঙ্গাইলে শাড়ি বুনছেন। হাজার হাজার বসাক তাঁতি আছেন এখনো। ভারতে কিছু বসাক শাড়ি বুনলে সেটা ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ হতে যাবে কেন?’ আসল ঘটনা তুলে ধরতে পারলে ডব্লিউআইপিওর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ রয়ে গেছে বলে মনে করেন এই শাড়ি ব্যবসায়ী।

পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের দাবি কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। এটি বিগত একশ বছরেরও বেশি পুরনো টাঙ্গাইলেই উৎপাদিত পণ্য। এই পণ্য বিশেষ কোনো পরিবারের ওপর নির্ভর হতেই পারে না। এই পণ্যের নামের সঙ্গে ‘টাঙ্গাইল’ বা একটি এলাকার নাম জুড়ে আছে। ওই এলাকার কেউ ভারতে চলে গেলে ওই এলাকা তো আর নিয়ে যেতে পারেনি। টাঙ্গাইল যেমন ভারতের নয়, টাঙ্গাইল শাড়িও তেমন ভারতের নয়।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বেড়েছে ক্যান্সার রোগী,চিকিৎসা সক্ষমতাও বাড়ছে
পরবর্তী নিবন্ধ২২ বছর পর আলোর মুখ দেখছে নৌ তদন্ত কেন্দ্র