জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়েছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই সুবাদে লোহাগাড়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মাঠে নেমেছেন অনেকেই। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরব হয়ে উঠেছে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে নানা আলোচনায়। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে জনমত যাচাই করছেন। অপরদিকে মাঠে–ঘাটে, চায়ের দোকানে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা করতেও দেখা গেছে।
সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন– বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহ উদ্দিন হিরু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহীদুল কবির সেলিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জহির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মিয়া মুহাম্মদ শাহজাহান, এস এম ছলিম উদ্দিন খোকন চৌধুরী, মাহমুদুল হক বাবুল ও মাহমুদুল হক পিয়ারু।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীক তুলে নেয়ায় চেয়ারম্যান পদে যেকোনো ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ রয়েছে। যার কারণে প্রার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের সমর্থিত ও দলের বাইরের প্রার্থীর নামও শোনা যাচ্ছে।
লোহাগাড়া উপজেলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল কিছুদিন যাবত অসুস্থ। বর্তমানে তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। তার ভাগিনা শাহাব উদ্দিন চৌধুরী জানান, গতবার জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
গতবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, দলের নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীরা চাচ্ছেন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হই। তাই এবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহ উদ্দিন হিরু জানান, দলীয় প্রতীক না থাকলেও দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে সমর্থন দিবেন। তাই তিনি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। এবার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত, উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহীদুল কবির সেলিম জানান, ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দলীয় প্রতীক না থাকলেও আমি দল থেকে সমর্থন প্রত্যাশা করব। দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই।
লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন জানান, সবসময় জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে এবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালীন এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। লোহাগাড়াকে একটি মডেল উপজেলা হিসাবে গড়ে তুলতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মিয়া মুহাম্মদ শাহজাহান জানান, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যেহেতু দলীয় প্রতীক থাকবে না, সেহেতু উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনো বাধা নেই। যে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন। তাই আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তীতে দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত আসলে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সিন্ধান্ত নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ছলিম উদ্দিন খোকন চৌধুরী জানান, এবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে আগ্রহী। তবে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে না। গতবার দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বহিষ্কার হয়েছিলাম।
কোনো রাজনৈতিক দলের পদে নেই মাহমুদুল হক বাবুল। তবে গতবার আধুনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী ছিলেন। এবার তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনি জানান, এলাকায় আমার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
রাজনৈতিক কোনো পদ–পদবী না থাকলেও মাহমুদল হক পিয়ারু জামায়াতের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। গতবারও তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন পেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছে আছে।
লোহাগাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ ছালেম জানান, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী দেয়া হবে। তবে এখনো পর্যন্ত প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি।
লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন জানান, আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে যা হয় সব প্রহসনই। এসবে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নাই। বিএনপি গণমানুষের দল। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এ প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো মানে হয় না। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তও তাই– এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। ফলে উপজেলা নির্বাচনে আমাদের কোনো দলীয় প্রার্থী দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
উল্লেখ্য, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ৬২৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ১০৮ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪ হাজার ৫১৮ জন। ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ ৪র্থ ধাপে লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।