কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত নগরীতে প্রবাহ স্বাভাবিক হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সংকট ছিল। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) বলেছে, আজ রোববার সকালের মধ্যে গ্যাসের প্রবাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যমান পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ তৈরি হতে সময় লাগছে বলে জানায় তারা।
এদিকে গ্যাসের অভাবে নগরীতে গণপরিবহনসহ সর্বত্র নাজুক অবস্থা অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রামের ৬৮টি সিএনজি স্টেশনের অধিকাংশতে গ্যাস পাওয়া যায়নি। এতে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও গ্যাস না পেয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় নাগরিক দুর্ভোগ প্রকট হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুর থেকে মেরামত করে আনার পর মার্কিন এক্সিলারেট এনার্জি টার্মিনালটি গত বৃহস্পতিবার চালু করা হচ্ছিল। কিন্তু সাগরের তলদেশে পাইপলাইনে সংযোগ দেয়ার সময় যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ে। এতে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পাইপলাইনের ভিতরে থাকা গ্যাস দিয়ে কিছুক্ষণ চললেও পরে ক্রমে সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাসশূন্য হয়ে যায় পুরো চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের চারটি সার কারখানা, একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং কয়েক হাজার বাণিজ্যিক ও ছয় লাখের বেশি আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সিএনজি স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গণপরিবহন চলাচল একেবারে কমে যায়। রান্নাঘরের চুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ রেস্টুরেন্টে শুক্রবার সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য ছোটে। কিন্তু বাড়তি টাকা দিয়েও অনেক মানুষ খাবার পায়নি। অনেকে চিড়া–মুড়ি ও কলা খেয়ে থেকেছেন। ভয়াবহ এক অবস্থার মাঝে শুক্রবার দিনটি পার করে চট্টগ্রামের মানুষ।
শুক্রবার রাত ১০টার পরে মার্কিন এঙিলারেট এনার্জি টার্মিনালটির সাথে পাইপলাইনের সংযোগ স্থাপন এবং গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। রাত তিনটার দিকে নগরীর কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস পাওয়া যায়। তবে বিস্তৃত এলাকা গ্যাস নেটওয়ার্কের বাইরে থাকে। পাইপলাইনে গ্যাসের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং চাপ না বাড়ায় অনেক এলাকায় গ্যাস জোটেনি। কলকারখানা চালু করা সম্ভব হয়নি। সিএনজি স্টেশনগুলোতেও গ্যাস দেয়া শুরু হয়নি। এতে করে শুক্রবারের মতো গতকাল শনিবারও নগরীতে গ্যাসের হাহাকার চলেছে। কিছু কিছু এলাকায় বাসাবাড়িতে গ্যাস পাওয়া গেলেও সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস না থাকায় গণপরিবহনে সংকট থেকেই যায়।
কেজিডিসিএলের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্যাস প্রবাহ শুরু হয়েছে। লাইনে প্রেসার কম থাকায় কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস পাচ্ছে না। তবে রাতের মধ্যে চট্টগ্রামে গ্যাসের প্রেসার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ৪৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের জন্য ২৬০–২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রেখে বাকি গ্যাস ন্যাশনাল গ্রিডে দেয়া হচ্ছে। আমদানিকৃত এলএনজি খালাস ব্যাহত হওয়ায় বাখরাবাদ ও তিতাসেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান তিনি।