বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের আগুনে মৃত্যু পোড়া চার মরদেহের ময়নাতদন্ত গতকাল শনিবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ বেগম। মরদেহের মধ্যে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ শনাক্ত করা গেছে। ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য পাঁজরের হাড় ও পায়ের হাড় সংগ্রহ করা হয়েছে।
নাশকতার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া চারজনকে আর চেনার উপায় নেই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হলে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রেলওয়ে পুলিশের এসআই সেতাফুর রহমান বলেন, চারজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মরদেহগুলো এতটাই পুড়েছে যে, চোখে দেখে কেউ শনাক্ত করতে পারছেন না। এ অবস্থায় পরিচয় শনাক্ত করতে প্রত্যেকের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। ওই ট্রেনের নিখোঁজ চার যাত্রীর স্বজনরা গতকাল শনিবার সকাল থেকে ভিড় করেন ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে। লাশ দেখার পর তারা কেউ মরদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
এসআই সেতাফুর বলেন, যারা স্বজনের দাবি নিয়ে আসছেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং পরে মরদেহ থেকে নেওয়া ডিএনএ নমুনা এবং দাবিদারদের নমুনা মিলিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে বিএনপির ডাকা হরতালের আগে শুক্রবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগ কাঁচাবাজারের কাছে বেনাপোল এক্সপ্রেসের একটি বগিতে আগুন দেওয়া হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আরো দুই বগিতে। ওই ঘটনায় চারজনের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয় ট্রেন থেকে। দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আটজনকে। তারাও শঙ্কামুক্ত নন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
লাশের খোঁজে স্বজন : যে চারজনের লাশের খোঁজে স্বজনরা এসেছেন, তাদের মধ্যে আবু তালহা সৈয়দপুরে আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। বাকিরা হলেন নাতাশা জেসমিন নেকি (২৫), এলিনা ইয়াসমিন ও চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমি (২৮)।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু তালহার ফরিদপুর থেকে ঢাকায় নেমে আরেকটি ট্রেন ধরে সৈয়দপুরে যাওয়ার কথা ছিল। ট্রেনে আগুন লাগার দুই ঘণ্টা আগেও তালহার সঙ্গে কথা হয়েছিল তার বাবা আব্দুল হকের। কিন্তু আগুন লাগার পর থেকে ছেলের ফোন বন্ধ পাচ্ছেন তিনি।
এলিনা তার বোন, দুলাভাই আর তিন ভাগ্নের সঙ্গে ঢাকায় ফিরছিলেন। ট্রেনে আগুন লাগার পর পরিবারের ৫ জন বগি থেকে নামতে পারলেও এলিনা ভেতরেই রয়ে যান। তার খোঁজে হাসপাতালের মর্গে ছুটে এসেছিলেন আইনজীবী বোন জাহিদা সুলতানা তনিমা। তার ভাই মো. ইমতিয়াজও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে তার খোঁজ করে বেড়াচ্ছেন।
ঢাকার নারিন্দার বাসিন্দা নাতাশা তার স্বামী আসিফের সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙায় আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে ওই ঘটনার শিকার হন। তার দগ্ধ স্বামী ভর্তি আছেন বার্ন ইন্সটিটিউটে। আর চন্দ্রিমার খোঁজে ঘুরছেন তার ভাই দিবাকর চৌধুরী। তারা থাকেন ঢাকার ইন্দিরা রোডে।